এবার মঙ্গলবারের হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করলো কলকাতা ও শহরতলীর বেশ কিছু বেসরকারি স্কুল। সূত্রের খবর, কোন কোন বেসরকারি স্কুল একক ভাবে আবার কোনও কোনও বেসরকারি স্কুল সংঘবদ্ধভাবে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করবে বলেই জানা গিয়েছে।
advertisement
এ প্রসঙ্গে সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের প্রিন্সিপাল নবারুণ দে বলেন " ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে তাতে আমাদের স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। ১১টি শুনানির পর এই রায় দেওয়া হয়েছে। আমরা অবশ্যই এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করব।" যদিও স্কুলগুলির সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি অবশ্য অভিভাবক মঞ্চের সদস্যরা। ইউনাইটেড গার্জেন ফোরামের আহ্বায়ক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন " এটা অমানবিকতার পরিচয় যে স্কুলগুলি সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে। ওরা হাইকোর্ট নিযুক্ত যে কমিটির কাছে আয় ব্যয়ের রিপোর্ট জমা দিয়েছে সেই রিপোর্ট ছিল ভুলে ভরা। ওরা বারবারই বলে আসছিল যে স্কুলগুলি কোন লাভ ক্ষতির জায়গা নয়। তাহলে আয়-ব্যয়ের দেওয়া রিপোর্টে এত অসঙ্গতি কেন থাকবে?"
উল্লেখ্য, লকডাউনের মধ্যেই রাজ্যের বেসরকারি স্কুল গুলি নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল লা মার্টিনিয়ার বয়েজ সহ ৬টি স্কুল। যদিও সেই মামলা সুপ্রিম কোর্ট ফিরিয়ে দিয়েছিল হাইকোর্টেই। স্কুল গুলির ফি বৃদ্ধি সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা তা দেখতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ১৭ অগাস্ট সে ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ১৮ তারিখ চূড়ান্ত নির্দেশ জারি করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই নির্দেশে স্কুল গুলিকে ৩১ অগাস্টের মধ্যে তাদের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ ও ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার কথা ছিল বেসরকারি স্কুল গুলির।
ফি কমানোর দাবি নিয়ে লকডাউনের পর থেকেই কার্যত অভিভাবকরা আন্দোলন শুরু করেছিল । শহর কলকাতার একাধিক বেসরকারি স্কুলের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাতে ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে অভিভাবকদেরও বিক্ষোভ পথ অবরোধ কর্মসূচি চলে। শুধু তাই নয় স্কুলের ফি দিতে না পারলে অনলাইন ক্লাস থেকে বাদ দেওয়া হবে এরকম নির্দেশ জারি করে কলকাতার কয়েকটি বেসরকারি স্কুল। তবে শুধু নির্দেশ নয়, কলকাতার বেশ কয়েকটি বেসরকারি স্কুল অনলাইন ক্লাস থেকে ফি না দিতে পারার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের বাদ দিয়ে দিয়েছিল । টানা তিন থেকে চার মাস অভিভাবকরা এই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে ছিল বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলগুলোতে। মঙ্গলবার ডিভিশন বেঞ্চে রায় অভিভাবকদের কাছে কিছুটা স্বস্তি দিলেও এবার সুপ্রিম কোর্টের যাওয়ার প্রস্তুতি অন্তত অভিভাবকদের কাছে কিছুটা অস্বস্তি বাড়িয়ে দিল বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। বুধবার দফায় দফায় বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল আইনজীবিদের মতামত নেওয়ার পাশাপাশি অনেক স্কুল এবার সংঘবদ্ধভাবে সুপ্রিম কোর্টে যেতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে পুজোর আগেই সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল করবে বলেও সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে।
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়