#কলকাতা: সকাল ৬.৩০ মিনিট। লিবার্টি সিনেমার সামনে রামদুলাল সরকার স্ট্রিট ৷ যাকে বলে ছাতু বাবুর বাজার। চায়ের দোকানে বসে আছি।চিনি ছাড়া চা বানাচ্ছেন দোকানদার। খানিক পরে একটি ঠেলা গাড়িতে করে একটি ড্রাম নিয়ে, এক বৃদ্ধ এসে দাঁড়ালেন। কলকাতায় প্রায় এলাকায়, সকালে যেমন জল সরবরাহ করতে আসে, ঠিক তেমন করে।খানিক বাদে বোতল, প্লাস্টিকের জার হাতে নিয়ে উপস্থিত হন কয়েকজন মহিলা ও পুরুষ। এই ভাবে জল নেবে? হতেই পারে! এখন তো জল নিয়ে মানুষ অনেকটা সচেতন। যেখান সেখানের জল খায় না। প্রথমটা খেয়াল না করলেও, নাকে গন্ধ আসার পর ফিরে দেখলাম, জল নয়, ওই বৃদ্ধ এই ভাবে নীল কেরোসিন তেল বিক্রি করতে এসেছেন। সেই কেরোসিন বেশ স্বচ্ছন্দে, বাধাহীন ভাবে, তিনি প্রত্যেকের কাছে বিক্রি করছেন।
advertisement
আমার ক্যামেরাটা তাক করলাম ওর দিকে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ কনস্টেবল তাঁকে সরে যেতে বললেন। ওই বৃদ্ধের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।তিনি প্রতিদিন নিজের পেট চালানোর জন্য এটা করে থাকেন। ওঁনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘আপনি কোথা থেকে তেল পান?’’ ওঁনার উত্তর, ডিলারের কাছ থেকে নিয়ে আসেন উনি। ‘‘মাত্র দু’টাকা লাভে বিক্রি করি বাবু, গরীব আদমি কি করে খাব বাবু ৷’’ যাঁরা ক্রেতা ছিলেন, তাঁদের বক্তব্য, একসঙ্গে অত টাকা দিয়ে গ্যাস কেনার ক্ষমতা নেই। তাই প্রতিদিনের রোজগারে, অল্প করে কেরোসিন তেল কেনেন তাঁরা। এই যুক্তিটা গ্রহণ যোগ্য হলেও অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন সবাই।
আমাদের রাজ্যে নীল কেরোসিন তেল সরকারি নিয়মে রেশন ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি হয়। কলকাতায় যার মূল্য ৪২ টাকা লিটার। খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০টাকায়। এই তেল সরবরাহ করছে বেশ কিছু অসাধু রেশন ডিলার। প্রশাসন সব জানলেও চুপ। যে তেল প্রতিটি গরীবের পাওয়ার দরকার তাঁরা পাচ্ছেন না। নীল কেরোসিন সরকার ভর্তুকি দিয়ে, নাগরিকদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। আর সেই ভর্তুকির তেল নিয়ে রমরমিয়ে চলছে কালোবাজারি। সব দেখেও নাগরিকেরা চুপ করে থাকেন। কেন?
এই প্রশ্রয়ে একদিন দেখা যাবে নিষিদ্ধ সব কিছু খোলা বাজারে বিক্রি হবে।তখনও সচেতন নাগরিকরা বলবেন, গরীব মানুষ। কী করে বাঁচবে? একজন তো চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘সকাল হলেই কেরোসিনের কল খোলে, আর তেল পড়ে।’