এই প্রশ্নে প্রতিপক্ষ তৃণমূল যে বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়বে না, সেটা জানা কথা। বিজেপির নবান্ন চলোকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী যেমন বলেছেন, 'ওদের প্রত্যাশার ফানুস ফুস হয়ে গিয়েছে।' ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, 'বিজেপির নবান্ন অভিযান আসলে 'ফ্লপ শো'। '
স্বাভাবিক কারণেই, মুখ্যমন্ত্রী বা পুরমন্ত্রীর সমালোচনাকে বিজেপি উড়িয়ে দিলেও, দিলীপ ঘোষ বললেন, ''২০২১- এর নির্বাচনের পর, প্রায় ১ বছর পরে বিজেপি মাঠে নামল, এখনি খুব বড় কিছু করার আশা করা ঠিক নয়। তবে,কর্মীরা আবার যে দলের কর্মসূচিতে ফিরছেন, এটাই বড় কথা। "
advertisement
আরও পড়়ুন: 'ডোন্ট টাচ মাই বডি', মহিলা পুলিশকর্মীরা ঘিরে ধরতেই হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর
২০২১ এ রাজ্যে সরকার গড়ার কথা বলে বিধানসভা ভোটে ভোকাট্টা হওয়ার পর থেকে বিজেপিতে ভাঁটার টান। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দলের গোষ্ঠী কোন্দল।নেতৃত্বের টানাপোড়েন। কিন্তু, শিয়রে ২৪-এর লোকসভা ভোট। দিল্লিতে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গেলে বাংলা চাই বিজেপির। তাই, নতুন রণকৌশল সাজাচ্ছে গেরুয়া শিবিরও।
তৃণমূলের অভিযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকারকে উৎখাত করতে একদিকে নবান্ন চলোর মতো গণতান্ত্রিক আন্দোলন। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে সেই দূর্নীতির প্যান্ডোরা বক্স খোলা। আপাতত, এটাই বিজেপির কৌশল।
বিজেপির একাংশ বলছে, সেই সূত্রেই , দিল্লির নির্দেশে তৈরি হয়েছে নবান্ন চলোর পরিকল্পনা। দলে ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে সুকান্ত, শুভেন্দু ও দিলীপকে রেখে মিছিলের তিন মুখ তৈরি করে দিলেন বনশাল। লাখো, লাখো টাকা খরচ করে চলল রাজ্য জুড়ে জেলায় জেলায় 'চোর ধরো, জেল ভরো' স্লোগানকে সামনে রেখে নবান্ন অভিযানের প্রচার। শেষমেশ, বিশেষ ট্রেন, বাসে চাপিয়ে দূর দূরান্তের জেলা থেকে আনা হল দলের অনুগামীদের।নবান্ন অভিযানে সামিল করতে। কিন্তু, এত কাঠ খড় পুড়িয়ে সত্যিই কি কিছু পেল রাজ্য বিজেপি?
আরও পড়়ুন: বিধানসভার স্বল্পকালীন অধিবেশন শুরু আজ, মুখ্যমন্ত্রীর পাশে পার্থর আসনে এ বার কে বসবেন, জানুন
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মতে, 'আসলে, সবটাই মিডিয়ার সামনে শক্তি প্রদর্শন। বিজেপির বিকল্প বাম ও কংগ্রেস নয়। বিজেপিকে এ রাজ্যে তৃণমূলের বিকল্প ভাবছে মানুষ। জনমানসে এটা তুলে ধরতেই তৃণমূল ও বিজেপির যৌথ উদ্যোগ।" তার জন্য গণমাধ্যমে ঘোষণা করে, ছবি তুলে জমায়েত করা। মিছিল করে গিয়ে পুলিশের তৈরি ব্যারিকেড ধরে নাড়া দেওয়া। আইন অমান্যের নামে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা। যেমন, আজ পুলিশের একটি পিসিআর ভ্যানে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায়, তৃণমূল বিজেপিকেই দুষেছে। আর, শুভেন্দু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি নয়, এ কাজ করেছে, তৃনমূল ও তার পুলিশ। যদিও, দিলীপ তদন্তের ওপরেই ভরসা রেখেছেন।
কিন্তু, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্য সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ হলেও, বিজেপির নবান্ন চলো " রাজনৈতিক কর্মসূচির চিত্রনাট্য এতটাই আগে থেকে ছকে রাখা যে তাতে আন্দোলনের স্বতঃস্ফুর্ত ঝাঁঝটা তৈরিই হল না। সে কারণেই হয়তো, বিজেপি-র এই আন্দোলন
প্রসঙ্গে তৃণমূলের মূল্যায়ন, বিজেপির নবান্ন চলো আসলে 'ফ্লপ শো' ৷ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, যে কোনও গণ আন্দোলনের উদ্দেশ্য মানুষকে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া। নিছক ' শো' করা নয়। বিজেপির নবান্ন অভিযান দেখতে গিয়ে মনে হয়েছে, এটা আদপে একটা বড় ''শো "। ' ফ্লপ' কি না তার বিচার করবে মানুষ।