আগামী ২০ মে থেকে শুরু করে টানা ৪০ দিন ধরে রাজ্যের প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তায় পঞ্চায়েত পদযাত্রা করবে বিজেপি যুব মোর্চা। মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁর দাবি, তাদের এই পদযাত্রা কোন তৃণমূলের অনুকরণ নয় বরং অভিষেকের নবজোয়ার আসলে বিজেপির গ্রাম সম্পর্ক অভিযানের অনুকরণ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে টানা প্রায় দু মাস ধরে রাজ্য জুড়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নবজোয়ার যাত্রা’-কে শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব দিতে বাধ্য হল বিজেপি। অভিষেকের নব জোয়ার যাত্রার শুরুতে বিক্ষিপ্ত কিছু গন্ডগোলের পর বিজেপি মনে করেছিল ২ মাস ব্যাপী এই কর্মসূচির মাঝপথেই রণেভঙ্গ দিতে হবে অভিষেককে। কিন্তু, বাস্তবে তা হয়নি। আইন শৃঙ্খলা জনিত কিছু ঘটনা ঘটলেও, তার জন্য অভিষেকের কর্মসূচিতে কোন ছেদ পড়েনি। বরং, উত্তরবঙ্গের ইটাহার, মালদহ, দক্ষ্মিণবঙ্গের মূর্শিদাবাদের মতো জেলায় অভিষেকের কর্মসূচিতে জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।
advertisement
রাজনৈতিক মহলের মতে, এসব ঘটনাই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। কারণ, বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছিল, উত্তরবঙ্গে যদি এই পরিস্থিতি হয় তাহলে দক্ষ্মিণবঙ্গে প্রবেশ করলে অভিষেকের কর্মসূচি আরও ব্যাপকতা লাভ করবে। তাই দেরি না করে, তড়িঘড়ি অভিষেকের প্রচারের পাল্টা প্রচার শুরুর জন্য দলের যুব মোর্চাকে দ্বিতীয় দফায় পথে নামার নির্দেশ দিল রাজ্য।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি নেতৃত্ব মুখে তাদের কর্মসূচি তৃণমূল অনুকরণ করেছে বলে অভিযোগ করলেও, জেলায় জেলায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে অভিষেকের এই প্রচারকে উপেক্ষা করার সাহস দেখাতে পারছে না বিজেপি। সে কারণেই তৃণমূলের সাংসদ, যুব নেতা ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিপরীতে একেবারে ওজন মেপে ৩২ বছর বয়সি, সর্বভারতীয় যুব নেতা ও সাংসদকেই সামনে আনল বিজেপি।
মোর্চার প্রস্তাবিত পঞ্চায়েত পদযাত্রা সম্পর্কে রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি ইন্দ্রনীল খান জানিয়েছেন, ২০ মে থেকে তাদের গ্রাম সম্পর্ক অভিযানের দ্বিতীয় দফা শুরু হচ্ছে। রাজ্যের তিনটি অংশ থেকে একযোগে এই পদযাত্রা শুরু হবে। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম ও গঙ্গাসাগরের চেমাগুড়ি থেকে শুরু হবে তিনটি যাত্রা। এর পর, টানা ৪০ দিন ধরে রাজ্যের ২০০টি গ্রামীণ বিধানসভার ৪০টি সাংগঠনিক জেলায় এই পদযাত্রা হবে।
দুই কলকাতা বাদে দলের ৪০টি সাংগঠনিক জেলার জন্য চল্লিশটি দল চল্লিশ দিন ধরে এই পদযাত্রা করবে। দুশোটি গ্রামীণ বিধানসভার ১ হাজার গ্রামের প্রতিটি পঞ্চায়েতে ৫ কিলোমিটার হিসাবে মোট ৩ হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা করবে বিজেপি যুব মোর্চা।
রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁর মতে, ‘এই কর্মসূচির লক্ষ্য মূলত রাজ্যের গ্রামীণ মানুষকে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের সুযোগ না মেলা নিয়ে তৃণমূলের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারের পাল্টা সঠিক বক্তব্য মানুষের কাছে তুলে ধরা।’ উদাহরণ হিসাবে বিজেপি নেতা বলেন, ১০০ দিনের কাজ, কেন্দ্রীয় আবাস যোজনা, পানীয় জল, মিড ডে মিল, রেশন, স্বাস্থ্য, শৌচালয়ের মতো বিষয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে রাজ্যকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে তৃণমূল যে মিথ্যা প্রচার করে জনমানসে তাদের পাহাড় প্রমাণ দূর্নীতি থেকে মানুষের চোখ ঘোরাতে চাইছে, সেটা যে সঠিক নয়, আসন্ন পদযাত্রা ও সভা সমিতির মধ্য দিয়ে সেই তথ্য মানুষের কাছে তা তুলে ধরা। তবে, কোনও ভাবেই তৃণমূলের মতো বড় মিছিল বা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত শিবির থেকে সভা করা তাঁদের লক্ষ্য নয়। তাঁদের লক্ষ্য গ্রামীণ মানুষের বাড়িতে পৌঁছন। তাঁদের পাশে বসে তাঁদের সুখ দুঃখের ভাগীদার হওয়া। ছোট ছোট পথ সভা, গ্রাম সভা, চাটাই বৈঠক করে মানুষের কাছে পৌঁছনো।
যদিও, প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপি যুব মোর্চার এই কর্মসূচিকে মাছি তাড়ানোর মতো করে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতা তাপস রায় বলেন, ‘যারা এখনও বুথে কমিটি তৈরি করতে পারল না তারা করবে পদযাত্রা? আসলে, অভিষেকের কর্মসূচি দেখে নড়েচড়ে বসেছে বিজেপি। তৃণমূলকে অনুকরণ করে বিজেপির এই কর্মসূচি আরও একবার সুপার ফ্লপ হতে চলেছে।’
বিজেপি যুব মোর্চার দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনকে মাথায় রেখে প্রথম দফায় তারা ২০০টি গ্রামীণ বিধানসভার ৫০০ টি গ্রামে গ্রাম সম্পর্ক অভিযান করেছিল। এর মধ্যে তারা রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলির গ্রামে গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে কেন্দ্রকে রিপোর্ট দিয়েছে। প্রথম দফার এই কর্মসূচির সাফল্যে উৎসাহিত হয়েই তারা দ্বিতীয় দফায় পঞ্চায়েত পদযাত্রার সিদ্ধান্ত নেয়। এর সঙ্গে অভিষেকের পদযাত্রার সাফল্য দেখে ‘নড়েচড়ে বসার’ কোন সম্পর্ক নেই।