শুভেন্দু বলেন, 'আলুর অভাবি বিক্রি থেকে শুরু করে চা বাগান ও অরণ্য ধ্বংসের বিরোধতা করে উত্তরবঙ্গ থেকে আন্দোলন শুরু হবে।' আলু চাষিদের সমস্যার কথা তুলে বিধানসভায় শুভেন্দু বলেন, 'আলু চাষিরা ন্যূনতম দাম পাচ্ছেন না। সম্প্রতি, গড়বেতা থেকে আরামবাগ পর্যন্ত রাস্তায় আলু চাষির ফসলের দাম না পেয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে রাস্তায় আলু ঢেলে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। অভাবি বিক্রি বাড়ছে। সরকারের উচিত সরকারের ঘোষিত সহায়ক মূল্যে আলু কিনে নেওয়া। পাশাপাশি, তাদের ঋন মকুব করে দেওয়া।' এই ইস্যুতে বিধানসভার বাইরেও আলু নিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ করে বিজেপি।
advertisement
আরও পড়ুন: কালীঘাটে আসছেন অখিলেশ, চলতি সপ্তাহেই বৈঠক মমতার সঙ্গে! থাকবেন অভিষেকও
শুধু আলু নয়, বিজেপির প্রতিবাদের তালিকায় ছিল চা বাগান, বনভূমি ধ্বংস করে আবাসন তৈরির মতো বিষয়। বিরোধী দলনেতা বলেছেন, উত্তরবঙ্গের বিধায়কদের নিয়ে তিনি এই বিষয়গুলিকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলন শুরু করবেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপির ইস্যু নির্বাচন থেকে স্পষ্ট তারা উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গল মহলের গ্রামীণ এলাকার আদিবাসী, জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের দাবি ও ক্ষোভকে পুঁজি করতে চাইছেন।
চা বাগানের রাজনীতি করা অলিপুর দুয়ারের বিধায়ক ও বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, 'চা বাগানের অতিরিক্ত জমিকে টি ট্যুরিজমের নামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। চা বাগানের লিজ দেওয়া জমিকে ফ্রি হোল্ড করার আইনি বৈধতা দিতে সরকার সম্প্রতি যে বিল পাস করিয়েছে, তার উদ্দেশ্য হল চা বাগানের জমিকে বাইরের ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া। এতে চা বাগানের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় আদিবাসী জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষকে কৌশলে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা রয়ছে বলে আশঙ্কা করছি আমরা।'
চলতি অধিবেশনের শুরু থেকেই লাটাগুড়ির বেসরকারি আবাসন নিয়ে সরব বিজেপির শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। অভিযোগ, বনাঞ্চল ধ্বংস করে বেসরকারি সংস্থার হাতে আবাসন গড়তে জমি তুলে দিচ্ছে সরকার। আবাসন প্রকল্প বাতিল না হলে লাটাগুড়ি সহ গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে এই ইস্যুতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর সঙ্গে ছবি পোস্ট দেবশ্রীর, পাল্টা আইনি নোটিশ পাঠালেন শোভন
এর সঙ্গে রয়ছে শিক্ষা দুর্নীতি। সোমবার শিক্ষা দূর্নীতিতে যুক্ত তৃণমূলের নেতা, কর্মীদের ছবি ও নামের তালিকা নিয়ে প্রদর্শনী করেন বিজেপি বিধায়করা। বিরোধী দলনেতা বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয় থেকে তৃণমূলের পঞ্চায়েতের নেতা এই দূর্নীতিতে যুক্ত। রাজ্যের মানুষের কাছে আমরা এই প্রদর্শনী তুলে ধরব।'
যদিও, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, 'এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যজুড়ে শাসক দলের নেতা কর্মীদের হেয় করার চক্রান্ত শুরু করেছে বিজেপি। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই তাকে চোর বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে।'
মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, 'আলু থেকে বনভূমি ধ্বংসের সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। এটা ওদের প্রচারে থাকার কৌশল।' কৃষিমন্ত্রী শোভনদেবের মতে, 'আলু চাষিদের অভাবি বিক্রি রুখতে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ১০ লাখ মেট্রিক টন আলু কেনার ঘোষণা করেছেন। আলুর সহায়ক মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। কোথাও কোথাও রাস্তায় আলু ফেলে বিজেপি সস্তা প্রচার পাওয়ার চেষ্টা করছে।'
তবে, মুখে এসব বললেও, দলের পোড় খাওয়া নেতাদের মতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ঠিকঠাক কার্যকরি না হলে, সরকারি সিদ্ধান্ত আলু চাষিদের ক্ষতে কতটা প্রলেপ দিতে পারবে সেটা,বলা শক্ত। পঞ্চায়েতের আগে আলু চাষিদের ক্ষোভ বাড়লে উত্তর ও দক্ষ্মিণবঙ্গের জেলায় জেলায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সেটা মাথায় রেখেই শুভেন্দু অধিকারীরা পঞ্চায়েতের আগে আলু, চা বাগান, বনভূমির মতো ইস্যুকে হাতিয়ার করতে চলেছেন।
