রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগের জেরে নিন্দিত হয়েছিলেন রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি। সেই বিতর্কের রেশ এখনও চলছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ‘দুর্যোধন-দুঃশাসন’বলে বিপাকে মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র।
আরও পড়ুনঃ সঞ্জয় দত্তের অকাল মৃত্যু! হুগলিতে গভীর শোকের ছায়া, কীভাবে মৃত্যু জানুন
advertisement
অভিযোগ, রবিবার মালদার রতুয়ায় এক দলীয় কর্মিসভায় সাবিত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ''মমতাকে সুর্পণখা বললে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুর্যোধন-দুঃশাসন বলব।'' অভিযোগ, এখানেই থেমে থাকেননি বিধায়িকা। গুজরাত নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। দেশের স্বাধীনতার জন্য গুজরাতের কোনও অবদান নেই বলে দাবি করেন সাবিত্রী। এর পরেই সাবিত্রী মিত্রর বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে নামে পদ্ম শিবির।
এই প্রসঙ্গ তুলে সোমবার বিধানসভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। জানান, মঙ্গলবার অগ্নিমিত্রা পাল-সহ সমস্ত মহিলা বিধায়ক নিন্দাপ্রস্তাব আনবেন। সাবিত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতায় সরব হন বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পালও। সাবিত্রীকে বরখাস্ত করার দাবি জানান আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক।
বিরোধী দলনেতার ঘোষণা মতো মঙ্গলবার সাবিত্রী ইস্যুতে বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনে বিজেপি। অগ্নিমিত্রা বলেন, ''অধ্যক্ষ মহাশয়, পিএম, এইচ এম-কে অপমান করা হয়েছে, এটা চলতে পারে না। গুজরাতিদের অপমান করা হচ্ছে। সরকারি দলের এই বিধায়কের ভূমিকা দুঃখজনক। আমার ভাবতে খারাপ লাগে আমি এরকম একটি বিধানসভার সদস্য।'' আসানসোল দক্ষিণের বিধায়িকার পাশাপাশি সাবিত্রী ইস্যুতে সুর চড়ান বাকি বিজেপি বিধায়কেরাও।
অন্যদিকে দেখা যায় সরকারি বেঞ্চ থেকেও পাল্টা স্লোগান দিতে। মূলত চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্রতিবাদ করেন সরকারি দলের বিধায়করা। চলে তীব্র বাদানুবাদ।
এরপর স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির মুলতুবি প্রস্তাব খারিজ করতেই আবারও শুরু হয়ে যায় হৈ হট্টগোল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেয়ার ছেড়ে উঠে বিধায়কদের শান্ত হতে বলেন স্পিকার। হাতজোড় করে বিরোধী বিধায়কদের শান্ত হওয়ার আর্জি জানাতে দেখা যায় মন্ত্রী শশী পাঁজাকেও। এরপরে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি।
সাবিত্রী মিত্রের মন্তব্যের নিন্দা করে বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, "এমন ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়, যাতে কারো অসম্মান হয়।" আত্মপক্ষ সমর্থনে সাবিত্রী এদিনও বলেন যে, তাঁর মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, ''আমি জনপ্রতিনিধি। আমার যে বক্তব্য যা ট্যুইট করেছেন তা ভুল। আমি কখনই বলিনি, গুজরাতিরা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেননি। বলেছি, মোদী-শাহ যাঁরা গুজরাত থেকে এসেছেন, তাঁদের ভূমিকা ছিল না স্বাধীনতা সংগ্রামে।''
অধিবেশনের বাইরে বেরিয়েও সাবিত্রী বলেন, ''আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি কোন ভুল কিছু বলিনি। ওরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে সুর্পনাখা বলে কটাক্ষ করে। আমি বলেছি স্বাধীনতা আন্দোলনে আরএসএস বা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোন অবদান নেই। আমি কখনোই গুজরাটিদের অপমান করিনি। আমি বলেছি আজকে দ্রৌপদীর যে বস্ত্রহরণ হয় তার দায় প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও নিতে হবে। আমার কথা ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।''
সাবিত্রী মিত্র এই কথা বলতেই ফের হট্টগোল শুরু করে দেন বিজেপি বিধায়কেরা।বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন হাউজে উপস্থিত না থাকায়, বিক্ষোভ-স্লোগানের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পালকে। একসময় অধ্যক্ষকে বলতে শোনা যায়, বিধানসভার ভেতরে স্লোগান দেওয়া চলবে না। তিনি বিধায়কদের সতর্ক করে বলেন, " মাঠে-ঘাটে যে কথা বলা যায়, বিধানসভার ভিতরে তা বলা যায় না। " এরপর বিধানসভা থেকে ওয়ার্ক আউট করে বিজেপি। স্লোগান দিতে দিতেই বিধানসভা কক্ষ থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে বেরিয়ে যান অগ্নিমিত্রা-সহ অন্যান্য বিজেপি বিধায়ক। চলে বিক্ষোভ।