আরতি বাউড়ি। শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউড়ির মা আরতি।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে জিতে যাঁরা নজর কেড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিজেপি-র শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনা বাউড়ি৷ বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছেন চন্দনা৷ তাঁর সঙ্গেই আরতিও এসেছেন কলকাতায়। দুই ছেলে তিন মেয়ের মা আরতি। আর পাঁচটা প্রান্তিক মহিলার সংসারকে ঘিরে যেমন স্বপ্ন দেখা সম্ভব, তার অতিরিক্ত কিছু ছিল না আরতিরও। সংসারকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াই করতে করতেই কখন বড় হয়ে গিয়েছিল মেয়ে চন্দনা। সে দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার ফুসরতও পাননি আরতি।
advertisement
আরও পড়ুন: শনি থেকেই পুরোদমে তদন্ত, বগটুইকাণ্ডে শুক্রেই যে পথে এগোচ্ছে CBI...
কিন্তু, আচমকা একুশের বিধানসভা ভোটে মেয়েকে বিজেপি প্রার্থী করা আর তারপরেই একচান্সে লটারির ফার্স্ট প্রাইজ জেতার মতো চন্দনার জিতে যাওয়াটা আরতিকে খুব আশ্চর্য করেছিল। মনে হয়েছিল যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো তাঁর মেয়ে চন্দনাও রাতারাতি একজন ''কেউকেটা " হয়ে গিয়েছেন। বাইরের লোকের সামনে সেটা চেপে রাখার চেষ্টা করলেও, ভিতরে ভিতরে পরিবর্তনটা টের পান আরতি। আর এবার বিধানসভায় এসে সেই বিস্ময়ের রেশ আরও যেন গাঢ হয়েছে তাঁর। বৃহস্পতিবার মেয়ে চন্দনার সঙ্গেই বিধানসভা দেখতে এসেছিলেন আরতি৷
আপাতত, কলকাতার কিড স্ট্রিটের বিধায়ক আবাসে মেয়ে চন্দনার কাছেই রয়ছেন আরতি। অধিবেশনে যোগ দিতে মেয়ে চন্দনাকে আসতে হবে বিধানসভায়। অগত্যা বিধায়ক মেয়ের সঙ্গী হয়ে বেরিয়ে পড়েন আরতিও। মুখ ফুটে না বললেও, মনের কোনে ইচ্ছেটা পুষে রেখেছেন আরতি। সেটা হল মেয়ের হাত ধরে বিধানসভা ঘুরে দেখা।
কিন্তু, রামপুরহাট ইস্যুতে সরগরম বিধানসভা। মাকে নিয়ে বিধানসভা ঘুরিয়ে দেখানোর সময় বার করতে পারছেন না চন্দনা। ফলে,ইচ্ছে থাকলেও তা পূরন হচ্ছে না আরতির। আবার, সুদূর বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাটির বিহারগুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আরতির মতো প্রান্তিক মানুষের পক্ষে আড়ষ্ঠতা কাটিয়ে নিজের মতো করে ঘুরে দেখাও সম্ভব হচ্ছে না । ফলে, বিধানসভায় এসেও বিজেপি পরিষদীয় দলের ঘরে বসেই কেটে গেল সারাটা দিন।
আরও পড়ুন: বাংলার মায়েদের জন্য প্রকল্পেও টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র,গুরুতর অভিযোগ অর্থমন্ত্রীর
তবে, তা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই আরতির। বললেন, "যাওয়ার আগে একদিন ঠিক দেখে নেব।" এবার, মাকে সান্তনা দেওয়ার মতো করে চন্দনা বলেন, ইচ্ছে আছে মাকে নিয়ে একবার বেলুড়, দক্ষিণেশ্বর যাব। দেখি কী হয়! মাকে কলকাতা ঘুরিয়ে দেখানোর ইচ্ছে প্রসঙ্গে চন্দনা বলেন, "আসলে কলকাতায় আমাদেরতো আর কোনও থাকার জায়গা নেই। আর, বিধানসভার অধিবেশন ছিল বলেই কলকাতায় আসা। ফলে, ভাবলাম, এই সুযোগে মাকে যদি একবার ঘুরিয়ে দেখানো যায়। "
মেয়ের কথা শুনে মৃদু হাসলেন আরতি। চোখের কোনটা একটু চিকচিক করে উঠল ক্ষণিকের জন্য। ভিতরের সেই আবেগকে আড়াল করতে, দৃষ্টি ঘুরিয়ে অগোছাল শাড়িটাকে আরও একবার গুছিয়ে নেওয়ার দিকে মন দিলেন আরতি। বিধানসভা না দেখেই বৃহস্পতিবার ফিরতে হল আরতিকেও৷ কল্লোলিনী কলকাতার ভিড়ে একাকার হয়ে যাবেন বাউড়ি বাড়ির মা।