বিজেপির অভিযোগ, কালিয়াগঞ্জ থানা আক্রমণ ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায়, মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরেই, গত রাতে বিজেপির স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিষ্ণু বর্মণের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু, বিষ্ণু বর্মণকে না পেয়ে, ৩৩ বছরের যুবক মৃত্যুঞ্জয়কে গুলি করে মারে পুলিশ।
এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আবার উত্তাল হয়ে ওঠে কালিয়াগঞ্জ। প্রতিবাদী মিছিলের নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। সেই মিছিল থেকেই সাড়ে তিনটে নাগাদ শুক্রবার ১২ ঘণ্টা উত্তরবঙ্গ বনধের ঘোষণা করেন দেবশ্রী। কিন্তু, দেবশ্রীর ঘোষণা নিয়ে রাজ্য বিজেপির কাছে কোনও বার্তা ছিল না। এ দিকে, বিজেপি সাংসদের এই ঘোষণার সমালোচনা করে বিজেপির বিরুদ্ধে লাশের রাজনীতি করার অভিযোগ তোলেন কুণাল।
advertisement
তৃণমূল মুখপাত্র কূণাল ঘোষ বলেন, ‘বিজেপি একটা লাশ খুঁজছিল। সেটা ওরা পেয়ে যেতেই, এখন লাশের রাজনীতি শুরু করেছে।’ দেবশ্রী বনাম কুণালের এই তরজা নিয়ে ততক্ষণে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। টিভির পর্দায় তা দেখে বিভ্রান্তি বাড়তে থাকে মুরলিধর সেন লেনে বিজেপির রাজ্য দফতরে। বিজেপির রাজ্য দফতরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও, উত্তরবঙ্গ বনধ নিয়ে দলের অবস্থান জানাতে গিয়ে চরম বিভ্রান্তিতে পড়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য।
রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পর, বনধ প্রসঙ্গে শমীক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখনও কিছু জানি না। রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী যদি বনধ এর ডাক দিয়ে থাকেন, তাহলে বনধ হবে। তবে, বনধের বিষয়ে রাজ্যস্তরে এখনও কিছু জানানো হয়নি।’
এর পরেই, ‘সাড়ে ৫ টা নাগাদ রাজ্য সভাপতি বালুরঘাট থেকে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন, আগামিকাল কোনও বনধ হচ্ছে না। এ বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত পরে ঘোষণা করা হবে।’ স্বাভাবিকভাবেই, রাজ্য সভাপতির এই বনধ বাতিলের ঘোষণায় নড়েচড়ে বসে দল। কালিয়াগঞ্জ ইস্যুতে দলের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি ওঠে দলের অভ্যন্তরে।
দলীয় নেতৃত্বের একাংশ মনে করেন, এই মূহুর্তে উত্তরবঙ্গে দলীয় সংযোগ যাত্রায় রয়ছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এই আবহে, বনধ ডেকে তা প্রত্যাহার করা হলে, তাকে উত্তরবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসাবে তুলে ধরে ফায়দা তুলবে তৃণমূল। ফলে, বনধ ঘোষণার পর এখন তা থেকে পিছিয়ে আসা রাজনৈতিক ভাবে ভুল হবে। রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জের মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। সেক্ষেত্রে, ঘোষণা যখন হয়ে গেছে, তখন তা প্রত্যাহার করার দরকার নেই।
সে সময়, সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বকে সুকান্ত নাকি বলেন, কোন প্রস্তুতি ছাড়া, উত্তরবঙ্গ জুড়ে ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকে তা সফল করা কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে, কালিয়াগঞ্জ, কালিয়াচকের মতো ঘটনা নিয়ে গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। তারপর, ধাপে ধাপে সেই আন্দোলনের পরিণতিতে উত্তরকন্যা অভিযান বা বনধ ডাকা যেতে পারে। যদিও, বনধের সমর্থনে ক্রমশই পাল্লা ভারী হতে থাকে দলে। আর, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বনধ নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার। শেষমেশ, মুখরক্ষা করতে অনিচ্ছাসত্বেও সাড়ে ৬ টা নাগাদ সেই সুকান্তকে উত্তরবঙ্গ বনধের ঘোষণা করতে হয়।
দলের একাংশের মতে, কালিয়াগঞ্জ ইস্যুতে রাজনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় থেকেও, বনধ ডাকতে গিয়ে বিজেপি যেভাবে হোঁচট খেল, তাতে দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই বেশি প্রকট হয়েছে। মুখরক্ষা,করতে বনধ খারিজ করার ১ ঘণ্টার মধ্যে আগের অবস্থান থেকে পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে, আবার সেই বনধের ডাক দেওয়ার মধ্যে বিজেপি রাজ্য সভাপতির রাজনৈতিক অপরিপক্কতার ছাপই দেখছেন রাজনীতিকদের একাংশ।
তবে, উত্তরবঙ্গ জুড়ে এত বড়মাপের বনধ ডাকার সিদ্ধান্ত রাজ্য সভাপতিকে অন্ধকারে রেখে কীভাবে নিলেন রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে দলে। প্রশ্ন উঠছে, দেবশ্রী কি তাহলে আচমকাই আবেগের বশে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? নাকি এর মধ্যেও রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠী রাজনীতির প্রভাব? অন্যদিকে, দেবশ্রীর ডাকা বনধকে খারিজ করে ১ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা কি দলের মুখরক্ষা করতে নাকি দেবশ্রীকে বার্তা দিলেন সুকান্ত?