২৩ নভেম্বর, রাজ ভবনে শপথ নেওয়ার পর আনন্দ বোস রাজ্যপাল হিসেবে তার প্রথম ভাষণে বলেছিলেন,'' আমি মনে করি, রাজ্যপাল হয়ে আমি এই মহান রাজ্যকে জানা ও তার রাজ্যবাসীর সঙ্গে সরসরি কথা বলার একটা বড় সুযোগ পেলাম। রাজ্যপাল হওয়ার সুবাদে, আমি এই রাজ্যের জনহিতে কিছু কাজ করতে পারব। রাজ্যপাল হিসাবে এটাই আমার বড় প্রাপ্তি।"
advertisement
সেই দিনই ঘনিষ্ঠ মহলে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বাংলা ভাষা শেখার বিষয়েও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। যেটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেওয়ার পর অতীতে অনেক রাজ্যপালই তাঁদের ভাষণে এসব কথা বলেছিলেন। কিন্তু, তাঁদের মধ্যে কেউই রাজ্য ও রাজ্যবাসীকে বুঝতে বাংলা ভাষা শেখার পাঠ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। পর্যবেক্ষকদের মতে, এখানেই তার পূর্বসূরিদের চেয়ে তিনি স্বতন্ত্র।
বাহাত্তর বছর বয়সি, কেরালিয়ান আনন্দ বোসের মাতৃভাষা মালওয়ালি। মালওয়ালি ছাড়া তিনি ইংরেজি ও হিন্দিতেও সাবলীল। এবার, তার সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে বাংলাও। রাজ ভবনে প্রায় ২০ বছরের বেশি দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিকের মতে, 'আনন্দ বোস ইচ্ছে করলে, বাংলা না শিখেই তাঁর রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। কিন্তু, তিনি চান এই রাজ্যকে আক্ষরিক অর্থে জানতে, রাজ্যবাসীর সঙ্গে তাঁদের ভাষায় কথা বলতে। তাই বাহাত্তর বছর বয়সেও বাংলা ভাষা শেখার জন্য তিনি এতটা আগ্রহ দেখাতে পেরেছেন। এটা একজন মামুলি আমলার পরিচয় নয়।"
আরও পড়ুন: বাজেট অধিবেশনে শাসক- বিরোধীর 'আস্থা' অর্জনই আসল চ্যালেঞ্জ নতুন রাজ্যপাল আনন্দ বোসের
রাজ্যপাল আনন্দ বোস তাঁর বাংলা শেখার হাতেখড়ির জন্য বেছে নিয়েছেন সরস্বতী পূজোর দিনটিকে। যেটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আবহমান কাল ধরে হিন্দু বাঙালি, শিক্ষার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসাবে সরস্বতী বন্দনা করে এসেছে। সরস্বতী পূজোর দিনে দেবীর আরাধানার শেষে পুরোহিতের হাত ধরে কালো পাথরের শ্লেটের ওপর চক, খড়ি দিয়ে বাংলা ভাষার আদ্যক্ষর লেখার নামই 'হাতেখড়ি'। আনুষ্ঠানিকভাবে,বাংলা ভাষা শেখা শুরুর বিশেষ দিন নির্বাচনে তাঁর বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রতি অনুরাগই শুধু নয়, বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতির প্রতি তিনি যে শ্রদ্ধাশীল, সেই বার্তাও দিতে চেয়েছেন রাজ্যপাল।
২৬ জানুয়ারি, বিকেল ৫ টায়, রাজ ভবনে এই বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। আমন্ত্রিতের লম্বা তালিকায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দোপাধ্যায়, পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টােপাধ্যায় এমন কি তৃণমূলের মুখপাত্র কূণাল ঘোষও আছেন। রাজ্যপালের আমন্ত্রণ গ্রহন করে সেদিন রাজভবনের অনুষ্ঠানে গেলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আবারও একবার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হতে পারে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
কিন্তু, আদৌ কি রাজভবনের অনুষ্ঠানে পা রাখবেন শুভেন্দু অধিকারী বা বিজেপি-র আমন্ত্রিতরা? যা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। জল্পনা উস্কে দিয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় নেতা স্বপন দাশগুপ্ত। একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে স্বপন, রাজ্যপাল আনন্দ বোসকে সরসরি তৃণমূলের 'জেরক্স মেশিন' বলে আক্রমণ করে বসেছেন গতকাল। এর আগে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জায়গায় নালিশ জানানের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শুভেন্দু।
যদিও, রাজ্যপালের আচরণ নিয়ে স্বপন, শুভেন্দুদের এই তোপ দাগাকে সমর্থন করেননি দিলীপ। দলের একাংশের এই আক্রমণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দিলীপ সাফ বলেন, ''রাজ ভবনের দিকে তাকিয়ে দিলীপ ঘোষ রাজনীতি করে না। যাঁরা তা করে, তাঁরা হতাশ হতে পারেন, আমি নই। "
রাজনৈতিক মহলের মতে, নতুন রাজ্যপালকে নিয়ে দোটানায় পড়েছে বিজেপি। রাজভবনের আমন্ত্রণ এড়াতে তাই আগাম তোপ দাগা শুরু করেছেন স্বপন দাশগুপ্তরা।
