তাপস পালের পর এবার রোজভ্যালিকাণ্ডে সিবিআই-এর জালে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা। মঙ্গলবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সাড়ে তিন ঘণ্টা জেরার পর সুদীপকে গ্রেফতারের পর রাতেই তাঁকে বিমানে ভুবনেশ্বর নিয়ে যাওয়া হয়।
ভুবনেশ্বের নিয়ে যাওয়ার পর রাতে এক দফা সুদীপবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই কর্তারা ৷
রোজভ্যালির থেকে দু'দফায় পনেরো লক্ষ টাকা নেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। দু'হাজার বারোয় সস্ত্রীক ইউরোপ সফরের জন্য আঠারো লক্ষ টাকা দেয় চিটফান্ড সংস্থাটি। বিলাসবহুল গাড়ি কিস্তির টাকাও মেটায় রোজভ্যালি। এমন তথ্য পেশ করেই বুধবার ভুবনেশ্বরে তৃণমূল সাংসদকে জেরা করে সিবিআই। যদিও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সব অভিযোগই উড়িয়ে দেন বলে খবর।
advertisement
সিবিআই ও সুদীপের মধ্যে কথোপকথন
সিবিআই- গৌতম সরকার ও মহম্মদ কালাম কে?
সুদীপ- চিনি না
সিবিআই- এ কি! আপনিই তো চিঠি হাতে দিয়ে ওনাদের গৌতম কুণ্ডুর কাছে পাঠিয়েছিলেন। ২০১০এ মহম্মদ কালাম দু'বার যায়। ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসে। গৌতম সরকার ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসে
সুদীপ- আমি এসব কিছুই জানি না। কেউ যদি আমার নাম করে আসে, তাহলে কি আমি পাঠিয়েছি এটা প্রমাণ হল?
সিবিআই- সুইৎজারল্যান্ড ও ইতালিতে কেমন ঘুরেছেন?
সুদীপ- এবার কি বলবেন, সেই টাকাও রোজভ্যালির? সংসদের ইকনমি ডিপার্টমেন্টে খোঁজ করুন। বুক আমি কবে করেছিলাম টাকা দিয়ে
সিবিআই- বুকিংয়ের টাকা ছাড়া, বাকি ১৮ লাখ তো গৌতম কুণ্ডু দিয়েছে। তাই নয় কি? টয়োটা গাড়িটা ২৬ লাখের। এটাতো আপনার গিফট পাওয়া
সুদীপ- এসবিআই-এ লোন করেছিলাম। খোঁজ নিন
সিবিআই- কাগজ কোথায়?
সুদীপ- আপাতত নেই, দিয়ে দেব
সিবিআই- আগে তো বলেননি এই কথা
সুদীপ- সব প্রমাণ হয়ে যাবে। দেখে নেবেন
সিবিআই- সেই তদন্তেই আছি আমরা
দুপুর ২টো নাগাদ সুদীপবাবুকে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করা হয় ৷ আদালতের কাছে ১২ দিনের সিবিআই হেফাজতের আবেদন করেন আধিকারিকরা ৷ পরে বিচারক আগামী ১০ তারিখ অবধি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন ৷
তাপস পালের গ্রেফতারের পর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসাররা। তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু, তলব এড়াচ্ছিলেন সুদীপ। ১ জানুয়ারি সিবিআই অফিসারদের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তাঁর। তাঁকে ৩ জানুয়ারি হাজিরা দেওয়ার চরম সময়সীমা দেওয়া হয়। তা আর এড়াতে পারেননি সুদীপ। মঙ্গলবার বেলা এগারোটা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছন সুদীপ। শুরু হয় টানা জেরা। তাঁর দেওয়া উত্তরে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি সিবিআই কর্তাদের। একইসঙ্গে, তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগও উঠেছে। সেকারণেই টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা জেরার পর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়।