পুলিশ সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দেখান। শাহ দম্পতির নিকট আত্মীয়রা জানান, সিসি ক্যামেরায় দেখতে পাওয়া ব্যক্তি দম্পতির পরিচিত, কিন্তু বেশ কিছুদি ধরে তার কোনও হদিশ ছিল না। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না। তখনই গোয়েন্দাদের সন্দেহ গিয়ে পড়ে ওই ব্যক্তির উপর। অন্য ছবি দেখাতেই যতীন মেহেতাকে চিনে ফেলেন দম্পতির পরিবার। যতীন গুজরাতের বাসিন্দা হলেও লিলুয়া থেকে সরাসরি লালবাজারে এসে গোয়েন্দাদের জেরার সম্মুখীন হয়। গোয়েন্দাদের হাজারো প্রশ্নে উত্তরে একনাগারে 'না' বলতে থাকা যতীন একসময় ভেঙে পড়ে! আর অসঙ্গতি মিলাতে পারে না! স্বীকার করে নেয় খুনের কথা। তার স্বীকারোক্তিতেই সামনে আসে অন্য দুই অভিযুক্ত সুবোধ কুমার সিং ও রত্নাকর নাথের কথা।
advertisement
সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সঙ্গে তাদের ছবি মিলে যেতেই কলকাতা পুলিশের অভিযান শুরু হয় অন্য দুই অভিযুক্তের খোঁজে। বিহারের বাসিন্দা সুবোধ কুমার সিং-কে পাকড়াও করা হয় শালিমার স্ট্রেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে, অন্যদিকে লিলুয়া এলাকা থেকে ওড়িশার বাসিন্দা রত্নাকর নাথকে নিয়ে আসা হয় লালবাজারে। তিন অভিযুক্তকে এক টেবিলে বসিয়ে জেরা করতেই খুনের কথা স্বীকার করে তিনজন। অভিযুক্তদের মধ্যে সুবোধের নাম পুলিশের খাতায় আগেই থাকায় পুলিশ তাকে জেরা করে দফায়-দফায়। পুলিশ জানতে পারে, সুবোধ কুমার সিং ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে অশোক শাহকে। এতটাই ক্ষিপ্ত ও হিংস্রভাবে ছুরি চালাচ্ছিল যে, ছুরির হাতল পর্যন্ত ভেঙে যায়।
অভিযুক্তদের কাছে ভয় দেখানোর জন্য বন্দুক ছিল। কিন্তু অশোক শাহ-র স্ত্রী রশ্মিতা শাহ স্বামীর খুনের দৃশ্য দেখে ফেলেছিলেন। তাই ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে রশ্মিতার মাথায় গুলি চালায় অভিযুক্তরা। খুনের পরে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি ধরে ধর্মতলায় যায় ৩জন, সেখান থেকে বাস ধরে লিলুয়া। পুলিশের কাছে তিন অভিযুক্ত জানায়, পুলিশি ধরপাকড়ের কথা শোনা মাত্রই গা-ঢাকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল, প্রয়োজনে রাজ্য ছাড়ার কথাও ভেবেছিল । পুলিশ জানতে চান, এই ঘটনার জন্য কত টাকার রফা হয়েছিল? আরও তো গয়না ছিল আলমারিতে, সেগুলো কেন নিল না তারা ? উত্তরে অভিযুক্তরা জানায়, খুন করে লুঠপাটের সমস্ত টাকা ও গয়না ছিল তাদের পারিশ্রমিক। খুনের পরে ভয়ে বাকি গয়নাতে আর হাত দেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানান, তিন অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও এখনো অধরা মূল অভিযুক্ত। তার খোঁজে তল্লাশি অভিযান চলছে। তিন অভিযুক্ত নিজের পরিচয় গোপন করার চেষ্টাও করেছিল। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালত তিন অভিযুক্তকে ২২শে জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। সিপি জানান, বাকি যারা জড়িত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে, তাদের পরিচিতি এখনই প্রকাশ্যে আনা হবে না। গ্রেফতার হওয়ার পরই পুলিশ তাদের পরিচয় প্রকাশ করবে । মূল চক্রীর পরিচয়ও গ্রেফতারের পর প্রকাশ্যে আনা হবে।
SUSOBHAN BHATTACHARYA