লিভ ইন পার্টনার আকাঙ্খা শর্মাকে খুনের আগে বাবা-মাকেও খুন করে উদয়ন। খুনি উদয়ন অপরাধমনস্ক মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
কখনও উদয়ন ভন রিচোসেন মেহরা, কখনও স্টিভ ভন রিচোসেন মেহরা ৷ এই সব নামেই একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলেছিল উদয়ন ৷ বাবাকে খুনের পর বীরেন্দ্র দাসের নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে সে ৷ আকাঙ্খা উদয়ন মেহরা নামেও অ্যাকাউন্ট চালাত খুনি, জালিয়াত উদয়ন ৷
advertisement
মিথ্যেয় ভরা উদয়নের ফেসবুক প্রোফাইল। তাই দিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের চোখধাঁধানো পরিচয় তুলে ধরেছিল উদয়ন দাস। নিজের নামে খুলেছিল চারটি অ্যাকাউন্ট। প্রতিটিতেই সে মেহরা পদবি ব্যবহার করত। পুলিশের নজর, উদয়ন ভন রিখটোফেন মেহরা নামে একটি বিশেষ প্রোফাইলে।
ফেসবুক প্রোফাইল অনুযায়ী ভোপাল নয় আমেরিকায় থাকত উদয়ন ৷ অ্যাকাউন্টে ঘনঘন নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া ও প্যারিসের উল্লেখ করেছে তিন খুনে অভিযুক্ত রায়পুরের বাসিন্দা ৷
উদয়ন ভন রিখটোফেন মেহরা, এই প্রোফাইল থেকে মোট ৪ টি পোস্ট করা হয়েছে ৷
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩- প্রথম পোস্ট প্যারিসে রয়েছে, ল্যাম্বার্ঘিনি গাড়ি কিনেছে ৷ তার ছবি দেওয়া ৷ তারপর থেকে ওই প্রোফাইল আর ব্যবহার করা হয়নি ৷
১ জানুয়ারি, ২০১৬- ওইদিন পোস্ট করা হয়, পিএইচডি করার নাকি প্রস্তুতি নিচ্ছে উদয়ন।
১০ জানুয়ারি, ২০১৬- নিউইয়র্কে ইউনাইটেড নেশনস-এর মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ চাকরি ছেড়ে দিয়েছে উদয়ন।
২২ জানুয়ারি, ২০১৬- পোস্ট করা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দফতরের ফরেন সার্ভিস অফিসারের মতো পদে যোগ দিচ্ছে উদয়ন। এখানেই শেষ নয়, ল্যাম্বার্ঘিনির মতো দামি গাড়ির সঙ্গে নিজের ছবিও দিয়েছিল উদয়ন।
নেক্সট প্রোফাইল আকাঙ্খা-উদয়ন মেহরা ৷ অন্যদিকে, আকাঙ্খার সঙ্গে নিজের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বোঝাতে ফেসবুকে চুম্বনের ছবিও পোস্ট করে উদয়ন ৷ একে অপরকে চুমু খাচ্ছে ৷ কারও মুখ দেখা যাচ্ছে না ৷ মিডিয়ায় ভিডিও চ্যাট বা চ্যাটিংয়ের সময় উদয়ন তার বান্ধবীদের জানাত, যে সে বিদেশ থেকে অনলাইন ৷
স্টিভ ভন রিখটোফেন মেহরা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বিমানবাহিনীর পাইলট ম্যান ফ্রেড অ্যালব্রেশট ফ্যুহেরর ভন রিখটোফেন আশিটি সফল অভিযান চালিয়েছিলেন। সেই পদবি ব্যবহার করে কি আশিটি খুনের ছক ছিল রায়পুরের জ্যাক দ্য রিপারের?
ফেসবুকে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এই সন্দেহেই আকাঙ্খাকে গলা টিপে খুন করে উদয়ন। সেরকমই সামান্য কারণে বাবা-মাকেও খুন করে উদয়ন। পুলিশ সূত্রে খবর, ইঞ্জিনিয়ারিং সেমিস্টারে উদয়ন ফেল করলেও তা বাবা-মাকে জানায়নি ৷ বরং বাবা-মাকে জানায় সে পাস করে গিয়েছে ৷ উদয়নকে চাকরি খুঁজতে বলেন তাঁরা ৷ যা তার পক্ষে সম্ভব নয় বুঝেই খুনের ছক ৷
শুধু খুন করাই নয়। বাবা-মাকে খুনের পর প্রায় এক বছর ধরে লাইফ সার্টিফিকেট দিয়ে বাবার পেনশন ভোগ করে উদয়ন। পরে ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে মায়ের নামে থাকা বাড়ি নিজের নামে করে নেয়। পরে সেই বাড়িও বিক্রি করে দেয় উদয়ন। বাবা-মায়ের সম্পত্তি দখল করেই বিলাসবহুল জীবনযাপন করত উদয়ন দাস।
আকাঙ্খা হত্যাকাণ্ডে প্রতি নিয়ত বেড়ে চলেছে রহস্য ৷ বাঁকুড়ায় আকাঙ্খার বাড়িতে যেত উদয়ন বলে জানা গিয়েছে ৷ কত সালে আকাঙ্খা -উদয়নের পরিচয়? সোশ্যাল মিডিয়াতেই কি দুজনের পরিচয়? আকাঙ্খার অ্যাকাউন্ট থেকে বহুবার টাকা তোলা হয় ৷ কী প্রয়োজনে কে টাকা তুলেছিল? আকাঙ্খার আগেই খুন হন উদয়নের বাবা-মা ৷ খুনের কথা কি আকাঙ্খা জেনে গিয়েছিল? আকাঙ্খা-উদয়নের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত কী? আকাঙ্খা-উদয়নের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তিটি কে? হত্যাকাণ্ড ঘিরে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন ৷