এই বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে হাজির হয়েছেন পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী, হেমন্ত সোরেন। এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “ঝাড়খন্ড থেকে এসেছি আমি। আর ঝাড়খন্ডের সাথে একটা কমন দেওয়াল হল বাংলা। এমন এমন জায়গা আছে যা দেখে বোঝা যায় না বাংলা আর ঝাড়খন্ড আলাদা কোথায়? দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর অতিথি আজ এখানে এসেছেন। ঝাড়খন্ড খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ রাজ্য। দেশ চালাতে আমাদের রাজ্যের ভূমিকা আছে। খনিজ সম্পর্কিত নানা সংস্থার উদ্যোগ আমাদের রাজ্যে আছে। এছাড়া টেক্সটাইল সেক্টরেও আমরা কাজ করি। আমাদের রাজ্যে আপনাদের স্বাগত। আমি চাই আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে।”
advertisement
এরপরেই হেমন্তের কথায় উঠে আসে পর্যটনের বিষয়। তিনি বলেন, “ঝাড়খণ্ড পর্যটনের জন্য দারুণ। এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যেখানে আমরা কাজ করতে পারি না।”
এই সম্মেলনে হাজির ছিলেন আইটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জীব পুরী, তিনি বলেন, “খবরের কাগজের প্রথম পাতার বিজ্ঞাপন দেখে চমকে উঠতে হয়। গত কয়েক বছরে বদলে গিয়েছে বাংলা। রাজ্যের উন্নয়ন ও সেই সঙ্গে জোড়া বেনিফিট দেখা যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে ভাইব্রান্ট শিল্পক্ষেত্র। আমাদের সংস্থার হেডকোয়ার্টার এখানে। আমরা যে রেসপন্স পাই তা অসাধারণ। সরকারের পলিসি এখন যথেষ্ট ভালো। আমরা এখানে কাজ করছি। সংস্থা ক্রেতাদের কথা ভাবে। এখানে কাজের জন্য শান্তির পরিবেশ রয়েছে। এখানে আমরা বিনিয়োগ করেছি। হোটেল, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এখানে কাজ করি। ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন AI’-রাজারহাটে রয়েছে। এখন গোটা বিশ্ব এই AI এর দিকে চেয়ে। আগামী দু’বছরে আমাদের হোটেলের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে।’
আরও পড়ুন: ‘ওরা আসছে!’ শুনেই সীমান্তে ‘অ্যাকশন’ BSF-এর! ভারতের ক্ষতি চাইলেই কী হাল হবে বুঝবে বাংলাদেশ
বাণিজ্য সম্মেলনে এরপর বক্তব্য রাখেন শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া। তিনি বলেন, “আমার ভাগ্য যে আমি এই বাংলায় জন্মেছি, পড়াশোনা করেছি। আমাদের হোটেল গ্রুপ হেডকোয়ার্টার এখানেই। কলকাতার পাশাপাশি একাধিক জেলায় আমাদের হোটেল আছে। কলকাতা আর বাংলা অত্যন্ত ভালো জায়গা। পূর্ব ভারতের একটা দারুণ মার্কেট । প্রশাসন এখানে সব রকম সাহায্য করে। টাইম রেগুলেটরি প্রসেস কিছু সময় নেয়। তবে সেটা কঠিন কিছু নয়। মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে নিজেও যোগাযোগ ও খবর রাখেন। আমাদের সংস্থার তরফে ৫ টি হাসপাতাল গড়া হচ্ছে । কলকাতার পাশাপাশি জেলাতেও হাসপাতাল গড়ার কাজ চলছে। বাংলার সৌন্দর্য সকলে জানেন। সেখানেই আমাদের হোটেল আছে। এছাড়া আগামী চার, পাঁচ বছরে আমাদের একাধিক আবাসনের কাজ চলছে। যা শেষ হয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন: বাংলায় এখন নবজাগরণ, রাজ্যে বিপুল বিনিয়োগ রিলায়েন্সের! মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় আম্বানি
বাণিজ্য সম্মেলনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন বিশিষ্ট শিল্পপতি, সজ্জন জিন্দাল। বাংলা সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাকে ইকনমিক পাওয়ার হাউজ বানানোর প্রচেষ্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করছেন। বাংলায় শিল্প গঠনের জন্য তুলনামূলক ভাবে পলিসি গঠন করছেন। বাংলা বরাবর নতুন নতুন আইডিয়ার জন্ম দেয়। JSW বাংলায় কাজ করে। আমাদের সিমেন্ট প্লান্ট বাংলায় চলছে। আমরা একদিনও শ্রম দিবস নষ্ট করিনা। শ্রমিক সমস্যা হোক বা অন্য কিছু আমাদের কাজে অসুবিধা হয় না। দুটো মেগা পাওয়ার প্লান্ট আমরা শালবনীতে গড়ব। আমাদের উদ্দেশ্য বাংলায় কাজ করা। JSW শিল্প পার্ক গড়ছে ২০০০ একর জায়গা নিয়ে। আমরা দুর্গাপুর বিমানবন্দরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কর্ম সংস্থান একটা বড় উদ্যোগ।
এই সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ভুটানের প্রতিনিধিও। তার কথাতেও শোনা যায় বাংলা বন্দনা। তিনি বলেন, “প্রতিবেশী দেশ হিসাবে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রয়েছে এই দেশের। আমার মায়ের জন্মস্থান এটি। মমতা দিদি ভুটানের ঘরে ঘরে অত্যন্ত পরিচিত নাম। কৌশলগত কারণে এই সামিট গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যোগাযোগ এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রেলওয়ে লিংক (বানারহাট-জলপাইগুড়ি)। অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ড্রাস্ট্রি। অপ্রচলিত শক্তি প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। ভুটান আর বাংলা ইতিহাস দিয়ে জড়িত। সেই সূত্রে সেতুবন্ধন হবে।”
প্রসঙ্গত, ক্ষুদ্র শিল্প থেকে তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া থেকে টেক্সটাইল, কৃষিভিত্তিক পণ্য থেকে কুটির শিল্প, পর্যটন বিশেষ গুরুত্ব পাবে সম্মেলনে। AI হাব নিয়েও এ বার হবে আলোচনা।
এ বছর সিআইআই ও ফিকি-র জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক বসছে নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারেই।মঙ্গলবার বিকেলেই চা-চক্রের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে এই সম্মেলন।সম্মেলনের অষ্টম এডিশনে যোগ দিতে চলেছেন চল্লিশটি দেশের প্রতিনিধিরা। আমন্ত্রিত ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন।
কলকাতার নিউটাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস)। চলবে দু’দিন। ৪০টি দেশের ২০০ প্রতিনিধি-সহ ৫,০০০ বিশিষ্ট জন অংশ নেবেন এই সম্মেলনে। ৪০টির মধ্যে ২০টি দেশ ‘পার্টনার’ বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাই কমিশনার সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এই সম্মেলন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সম্মেলনে কত বিনিয়োগ এল, সে দিকে নজর থাকবে রাজ্যবাসী থেকে বিরোধী, সকলের।