পঞ্চায়েত ভোট যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, লোকসভা ভোটে রাজ্যে ২৪ আসনের লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন অমিত শাহ, নাড্ডারা। সভা সমিতিতে ইতিমধ্যেই যখন দলের বড় নেতারা কেউ কেউ বলতে শুরু করে দিয়েছেন লোকসভা নির্বাচনে তারা জেলার কোন কোন আসন মোদিজির হাতে তুলে দিচ্ছেন, তখন জেলায় জেলায় দলের সংগঠনের শক্তি সম্পর্কে বাস্তবে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্যই নেই রাজ্য নেতৃত্বের হাতে? জেলাকে পাঠানো রাজ্যের এই নির্দেশিকায় তেমনটাই মনে করছে দলের একাংশ।
advertisement
আরও পড়ুন: সফরে অমিত শাহ, বড় পরিকল্পনা তৃণমূলের! আলোচনা ৬০ আসনের প্রার্থী নিয়ে
জেলা সভাপতিকে যে' রিপোর্ট ' পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব, সেখানে মোট ৫ দফা তথ্য চাওয়া হয়েছে। জেলা সভাপতির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, জেলা কমিটি, জেলা মোর্চা, বিভাগ ও সেলের কর্মকর্তাদের নাম ও ফোন নম্নর। একই ভাবে এ জেলার অধীন সমস্ত মণ্ডল, অঞ্চল, ব্লক, শক্তিকেন্দ্র এবং বুথের তথ্য জানাতে হবে রাজ্যকে। বিশেষ ভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত কত বুথ কমিটি ও তার নির্বাচিত সভাপতি করা গেছে তার হিসাব। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, জেলার সংগঠনের বিষয়ে বিস্তারিত এই তথ্য জানতে চেয়ে রাজ্য নেতৃত্ব, জেলা সভাপতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, তার পাঠানো রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই জেলা সম্পর্কে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য।
নির্দেশিকায় রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, " 'আপনি যতটা ডাটা ( তথ্য) পাঠাবেন, আপনার জেলায় সাংগঠনিক পরিকাঠামো ততটাই তৈরি হয়েছে বলে ধরে নেবে রাজ্য নেতৃত্ব। আপনার পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা জেলার সাংগঠনিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন করব। যদি কোনও তথ্য না আসে, তাহলে আমরা আপনার জেলাকে সাংগঠনিক ভাবে 'দুর্বল জেলা'হিসাবে চিহ্নিত করব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ করব। "
আরও পড়ুন: '...দশ বছর পর্যন্ত কারাবাসের শাস্তি হতে পারে', বড় সতর্কতা রেলরক্ষী বাহিনীর
রাজ্য বিজেপির এই চিঠিকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেতা ও সংগঠক তাপস রায় বলেন, ' আসলে, আমরা তো এটাই জানি। ভোট এলে রাজ্য বিজেপিতে কমিটি, সংগঠন এসব কথা শোনা যায়। বাকি সময় ভোঁ ভাঁ। আমরা ৩৬৫ দিন, ১২ মাস, টোয়েন্টি ফোর ইনটু সেভেন পার্টি। আর, ওরা হল মরশুমী, পরিযায়ী ভোট পার্টি। " যদিও, বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এই রিপোর্ট চাওয়ার মধ্যে কোন অসঙ্গতি খুঁজে পাননি। শমীকের দাবি, বিজেপি একটা সংগঠন নির্ভর গণতান্ত্রিক দল। জেলা থেকে বুথের সাংগঠনিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন রাজ্য করে না। যে কোনও তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা নেতৃত্বের ওপরেই রাজ্য আস্থা রাখবে, এটাই স্বাভাবিক। তৃণমূলে কোনও গণতন্ত্র নেই। ওরা বিজেপির সংগঠনের বিষয়ে কী বলবে?
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ৭ জানুয়ারি রাজ্যের সাংগঠনিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কলকাতায় নাড্ডার বৈঠক, শেষ মূহুর্তে কেন স্থগিত করে দেওয়া হল, রাজ্যের এই চিঠি থেকে তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। যদিও, রাজ্য বিজেপির দাবি, জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের জন্য শেষ মূহুর্তে রাজ্য সফর স্থগিত করতে হয়েছে নাড্ডাকে। সমালোচকদের মতে, ঘটনা যাই হোক না কেন, জেলা নেতৃত্বের কাছে সংগঠন সম্পর্কে রাজ্য নেতৃত্ব যে রিপোর্ট চেয়েছে, সেটা বিজেপির মতো সংগঠিত দলের কাছে কাম্য নয়। তাহলে কি জেলায় জেলায় সংগঠন নিয়ে নিজেরাই সন্দিহান বঙ্গ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব?
সূত্রের খবর, রাজ্য নেতৃত্বের এই চিঠি পাবার পরে, জেলা নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন,নাড্ডার গুঁতোয় নিজেদের দোষ ঢাকতে রাজ্য নেতৃত্ব এবার তাদের বলির পাঁঠা করতে চাইছে।
