গত ২ মার্চ সাগরদিঘি বিধানসভার ফল ঘোষণা হলেও বাইরন বিশ্বাসের শপথ নিয়ে কিছুটা জট পাকিয়ে ছিল। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে শংসাপত্র পেয়ে গেলেও বাইরনের শপথ আটকে থাকায় রাজ্যপালের শরণাপন্ন হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি রাজ ভবন থেকে তাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল, শপথ গ্রহণের জন্য পরিষদীয় মন্ত্রকের চিঠি পেলে তিনি পদক্ষেপ করবেন। এর পর, বাইরনকে নিয়ে কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো, অসিত মিত্ররা বিধানসভায় অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন।
advertisement
আরও পড়ুন: পুরী যাচ্ছেন মমতা, পুজো দেবেন জগন্নাথ মন্দিরেও! ওড়িশা সফরে একগুচ্ছ কর্মসূচি
নিয়ম অনুযায়ী, কমিশনের শংসাপত্র পাওয়ার পাওয়ার পর তা বিধানসভার সচিবালয়ে জমা দিতে হয়। বিধানসভার সচিবালয় সেই শংসাপত্র হাতে পেলে পরিষদীয় মন্ত্রক শপথের আনুষ্ঠানিক অনুমতির জন্য রাজ ভবনকে চিঠি পাঠায়। সাধারণত পরিষদীয় মন্ত্রকের চিঠির ভিত্তিতে রাজ্যপাল শপথ দেওয়ানোর জন্য স্পিকারকে মনোনীত করেন। এটাই রীতি। তবে, স্পিকারের বদলে তিনি নিজে অথবা তার মনোনীত যে কোনও ব্যক্তিকে শপথ দেওয়ার জন্য নির্বাচন করতেই পারেন।
ভূতপূর্ব রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে অধ্যক্ষের সংঘাতের জেরে রাজ্যপাল নিজেই মূশিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও করিমপুরের জয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছিলেন। কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি ছিল না। মূলত পরিষদীয় মন্ত্রক থেকে রাজভবনের অনুমোদন নিতে প্রথা মাফিক চিঠি দিতে কিছুটা দেরি আর তার মধ্যে রাজ্যপালের দিল্লি সফরের কারণে বাইরনের শপথে এতটা দেরি হল বলে দাবি করছে কংগ্রেস।
যদিও পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় দু' জনেই একই সুরে দাবি করেছেন, বাইরন বিশ্বাসের শপথের বিষয়ে পরিষদীয় মন্ত্রকের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সূচি মেনেই, চিঠি পাঠানো হয়েছিল রাজ ভবনে। রাজ ভবন থেকে রাজ্যপালের নির্দেশিকা আসতে দেরি হওয়ার জন্যই শপথ গ্রহণে এই বিলম্ব হয়েছে।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধরনায় বসবেন মুখ্যমন্ত্রী! মারাত্মক অভিযোগ মমতার
যাই হোক, জট খুলতে গতকাল দিল্লি থেকে অধীর রঞ্জন চৌধুরী সরাসরি রাজ্যপালকে ফোন করেন এবং শপথের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য অনুরোধ করেন। রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ফোন পাওয়ার পরেই রাজ্যপাল অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে জানান তিনি এখনি ফাইলটির খোঁজখবর নিচ্ছেন। সূত্রের খবর, এক ঘণ্টার মধ্যেই বাইরন বিশ্বাসের শপথ সংক্রান্ত ফাইলে প্রয়োজনীয় অনুমতি দিয়ে দেন রাজ্যপাল। একই সঙ্গে নিজেও টুইট করে বলেন, তিনি আইন মোতাবেক স্পিকারকে এই শপথ দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাইরনের শপথ নিয়ে জলঘোলা শুরু হয় স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায়েরই একটি মন্তব্যকে ঘিরে। বারুইপুরে নিজের বিধানসভা এলাকায় দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে বিমান বলেন, 'বাইরন আমাকে বলেছে,তিনি তৃণমূলেরই লোক। নির্বাচনে তৃণমূলের লোকেরাই তাঁকে ভোট দিয়েছে।' স্পিকারের এই মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক বাঁধে রাজ্য রাজনীতিতে। এর পর, গত ১৭ মার্চ দলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সাগরদিঘির ফল নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, বাইরন বিজেপির লোক, ওকে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে, সিপিএম সমর্থন করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে সমস্বরে প্রতিবাদ করে বিরোধীরা। শেষমেশ আজ সেই জট কাটল।
সদ্য সমাপ্ত সাগরদিঘির নির্বাচনে তৃণমূলকে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে হার স্বীকার করতে হয়েছে বাম - কংগ্রেসের কাছে। ২০২১- এর বিধানসভা নির্বাচনের পর, কোন উপনির্বাচনে তৃণমূলের এই ফল রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। সে কারণেই বাইরনের শপথকে ঘিরে আম জনতার কৌতূহল রয়েছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল।