বাড়িতে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা জটিল রূপ নেয়—রক্তে সংক্রমণ, বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা এবং একাধিক অঙ্গের সমস্যা। ভেন্টিলেশনে কাটছিল দিন। চিকিৎসকেরা আপ্রাণ চেষ্টা চালালেও তাঁকে আর ফিরিয়ে আনা গেল না।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের পর এ বার কী উপহার পাবে বাংলা? একুশের মঞ্চে বড় ঘোষণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
advertisement
আপনার পোস্ট অফিসে অ্যাকাউন্ট আছে? তাহলে এখনই এটা করুন, নইলে অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ হয়ে যাবে!
নকশালবাড়ি আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন আজিজুল হক। ১৯৭২ সালে চারু মজুমদারের মৃত্যুর পর তিনি সিপিআই (এম-এল)-এর দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধানের দায়িত্ব নেন। তাঁর লেখা “কারাগারে ১৮ বছর” বইটি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নয়, বরং রাজনৈতিক বন্দিত্বের নির্মম ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
কারাগার ছিল তাঁর জীবনের দীর্ঘতম অধ্যায়। বিভিন্ন অভিযোগে তাঁকে একাধিকবার গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৭ সালে ছাড়া পেলেও ১৯৮২ সালে ফের গ্রেফতার হন। ১৯৮৬ সালে জেলের মধ্যে তাঁর উপর হওয়া শারীরিক নির্যাতনের খবর প্রকাশ্যে আসে। তৎকালীন বাম সরকারের দুই মন্ত্রী দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও যতীন চক্রবর্তী জেলে গিয়ে দেখা করে বলেন, তাঁর শারীরিক অবস্থার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া উচিত। এমনকি কংগ্রেস নেতা সুব্রত মুখার্জিও স্বচক্ষে তাঁর শরীরে অত্যাচারের চিহ্ন দেখেছিলেন বলে জানা যায়।
রাজনীতি থেকে অনেক আগেই সরে এলেও সমাজচিন্তা ও লেখালিখি ছাড়েননি। প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভাষা শহীদ স্মারক সমিতি’, লিখতেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এবং ‘আজকাল’-এ। জেলে বসেই রচনা করেন “কারাগারে ১৮ বছর”। সেই পাণ্ডুলিপি পুলিশের হাতে যাওয়ার আগেই সাংবাদিক অশোক দাশগুপ্ত এবং ‘আজকাল’-এর এক প্রতিবেদকের তৎপরতায় প্রকাশ পায়।
সেই বইয়ে উঠে আসে জেলের নির্মম বাস্তবতা—সকালে লাঠির আঘাতে ঘুম ভাঙানো, পচা খাবার, নিরন্তর মানসিক নির্যাতন, সহবন্দীদের ওপর হওয়া হত্যাকাণ্ড—সবই তাঁর কলমে উঠে এসেছে নিঃশব্দ অথচ গর্জনময় প্রতিবাদ হয়ে।
আজিজুল হকের মৃত্যু শুধুমাত্র একজন প্রাবন্ধিকের অন্তর্ধান নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সময়ের, একটি প্রতিবাদী ইতিহাসের অন্তিম পংক্তি। তাঁর লড়াই, আদর্শ আর লেখনী আগামী প্রজন্মের সামনে রয়ে যাবে সাক্ষী হিসেবে—এক অসমাপ্ত প্রশ্নচিহ্ন হয়ে। তাঁর প্রস্থান এক অধ্যায়ের অবসান—কিন্তু তাঁর স্মৃতি হয়ে রইল ইতিহাসে, চেতনায়, এবং সংগ্রামে।