উৎপল চক্রবর্তী । প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিন্দুমাত্র পরোয়া না করা আপাদমস্তক বেপোরোয়া এই মানুষটি নিজেই নিজেকে একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন । দেশ ভাগের বেশ কয়েকবছর আগে বাংলাদেশের বগুড়া থেকে এরাজ্যের বালুরঘাটে চলে এসেছিলেন সম্ভ্রান্ত চক্রবর্তী পরিবার ।১৯৩৮ সালের ২৯ মে সেই পরিবারেই জন্ম নেন উৎপল চক্রবর্তী । বালুরঘাটে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে পরিবারের সঙ্গে মালদা চলে আসেন তিনি । সেখানে কলেজের পড়াশোনা শেষ করে নিজে ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন । অল্পদিন পরেই স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন।কিছুদিন চাকরী করার পর প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরীতে পদত্যাগ করে বানিপুর প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষন শিবিরে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন । গত শতকের মাঝামাঝি তিনি বদলী হয়ে বাঁকুড়ার ছান্দারে প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষন শিবিরে কাজে যোগ দেন । ছোট থেকেই চারু ও কারু শিল্পে ঝোঁক থাকায় অধ্যাপনার পাশাপাশি সেই কাজ চালিয়ে যান তিনি । সত্তরের দশকের শেষ ভাগে শিল্প সাধনায় পুরোপুরি ডুবে যেতে অধ্যাপনার কাজ ছেড়ে ছান্দারে অভিব্যাক্তি নামে নিজের আশ্রম গড়ে তোলেন ।
advertisement
এরপর দিন যত গড়িয়েছে ততই ছান্দারের অভিব্যাক্তির পরিধি যেমন বেড়েছে তেমনই উৎপল চক্রবর্তীর খ্যাতি ছরিয়ে পড়েছে দেশে বিদেশে ।নিজের অভিব্যাক্তিতে বসে কঠোর সাধনায় উৎপল চক্রবর্তী কাটুম কুটুম , চিত্রকলা , হস্ত শিল্প , ভাস্কর্য ও লোক সঙ্গীত শিল্পে ক্রমশ বিখ্যাত হয়ে ওঠেন । শুধু নিজে সাধনা করা নয় সাধনায় অর্জিত জ্ঞান অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দিতে এই শিল্পী ছিলেন অকৃপন । নিপাট এই ভাল মানুষটির ইচ্ছা ছিল বাঁকুড়া জেলার শিল্প ও সংস্কৃতির অন্যতম পিঠস্থান হিসাবে তিলে তিলে গড়ে তোলা অভিব্যাক্তি কে আগামী প্রজন্মের জন্য বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে তুলে দেওয়ার । সে প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছিল । কিন্তু তার আগেই আজ সকালে বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে জীবনাবসান হয় তাঁর । তাঁর মৃত্যুর খবর ছরিয়ে পড়তেই অই নার্সিংহোমে পৌঁছে যান বাঁকুড়ার বিধায়ক , জেলার পুলিশ সুপার সহ শিল্প সংস্কৃতি জগতের অগনিত মানুষ । রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও পরমাত্মীয়কে হারানোর যন্ত্রণায় এদিন চোখের জলে ভেসেছেন অনেকেই । সকলেরই দাবি উৎপল চক্রবর্তীর চলে যাওয়া বাংলার শিল্প সংস্কৃতি জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি ।