ঘটনার ১৩ দিনের মাথায় অবশেষে পুলিশের সামনে হাজিরা দিলেন অরিত্র৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যাদবপুর থানায় আসেন অরিত্র৷ এ দিন সকালেই অবশ্য সমাজমাধ্যমে তিনি দাবি করেছিলেন, কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়েছিলেন বলেই খোঁজ মিলছিল না তাঁর৷
শুধু অরিত্র নয়, এ দিনই যাদবপুরের তৃতীয় বর্ষের বাংলার পড়ুয়া রুদ্র চট্টোপাধ্যায় এবং আর এক প্রাক্তন ছাত্র সায়নদীপ দাঁ নামে দুই ছাত্রকেও যাদবপুর থানায় ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ৷ জিজ্ঞাসাবাদের পর রুদ্র এবং সায়নদীপকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ তবে অরিত্রকে গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ৷ এর পর তাঁকেও ছেড়ে দেওয়া হয়৷
advertisement
কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসএসডি) বিদিশা কলিতা জানিয়েছেন, অরিত্র সহ তিনজনের বয়ানই খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ তদন্তের স্বার্থে তাঁদের ফের ডাকা হতে পারে৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার পর অভিযুক্ত হিসেবে একাধিক নাম সামনে আসে। সেই সকল নামের মধ্যে অরিত্র মজুমদার ওরফে আলু নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকের নামও একটি চ্যাটের কথপোকথনের মাধ্যমে উঠে এসেছিল। অভিযোগ, উঠে ঘটনার দিন মেইন হস্টেলে এই অরিত্র উপস্থিত ছিলেন। তবে পরদিন থেকে হঠাৎ অরিত্র উধাও হয়ে যান বলেও অভিযোগ। তিনি শ্রীনগরে গা ঢাকা দিতে পারেন বলেও একাংশ দাবি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে পোস্টার পড়ে অরিত্র কোথায়?
বাম ছাত্র সংগঠন ফেটসুর সদস্য ছিলেন অরিত্র৷ গত ১৪ অগাস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক পড়ুয়া গৌরবের মাধ্যমে সমাজমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে ফেটসুর যাবতীয় পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান অরিত্র৷ এর পরেও অবশ্য তাঁর খোঁজ মেলেনি৷ এরই মাঝে হঠাৎ আজ সকালে ফেসবুকে ট্রেন ও বিমানের টিকিট আপলোড করে আত্মপক্ষ বিবৃতি লেখেন অরিত্র। ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই বলেও দাবি করেন অরিত্র। যদিও হস্টেলের রেজিস্ট্রারে ১১ অগাস্ট তাঁর সই মিলেছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসএসডি)-এর উপস্থিতিতে হোমিসাইড শাখার কয়েকজন অফিসার ও থানার অফিসাররা মিলে অরিত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন বলেই পুসিশ সূত্রে খবর৷ সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদে অরিত্র দাবি করেছেন, ১০ তারিখের পর থেকে তিনি নো নেটওয়ার্ক জোনে ছিলেন। ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর নাম যে জড়িয়েছে, তাও তিনি জানতেন না।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, অরিত্র যদি নো নেটওয়ার্ক জোনে থাকেন তাহলে ১৪ তারিখ তিনি কেন হঠাৎ গৌরবের মাধ্যমে পদত্যাগ করলেন? আর যদি গৌরব তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে থাকেন, তাহলে অরিত্র নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন কেন? এই পদত্যাগ কেনই বা ‘কাশ্মীরে’ থাকা অবস্থায় করা হল। ফিরে আসা পর্যন্ত কি অপেক্ষা করা যেত না?
যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২ জন প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ আদালতেও পুলিশ আজ দাবি করেছে, ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় র্যাগিংয়ের প্রমাণ মিলেছে৷ ফলে এই ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বাড়ে কি না, সেটাই এখন দেখার৷
সহ প্রতিবেদন- সৌরভ তিওয়ারি