যখনই জাগিবে তুমি, তখনই সে পলাইবে ধেয়ে..."
প্রতিবাদ! বিষয়টা খুব জরুরি৷ ক্ষমা, ভয় কোনওটাই নয়৷ বরং কথা বলুন। আপনার সঙ্গে কী হয়েছে সেটা অন্যদের বলুন। আইনের সাহায্য নিন। বলতে শিখুন 'না' মানে 'না'। এর পরে আর কোনও কথা হতে পারে না। বুঝতে শিখুন কোনটা হেনস্থা, কোনটা যৌনহেনস্থা।
কর্মক্ষেত্রে যৌনহেনস্থা- এটাই ছিল -এর পশ্চিমবঙ্গ শাখা গত শনিবার আয়োজিত আলোচনাসভার মূল আলোচ্য। The Corner Courtyard-এ আয়োজিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্রীরঞ্জনী জোশী (Sriranjani Joshi, Chairperson, CII IWN West Bengal Chapter and Director and Trustee), হাইকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট কিশোর দত্ত (Kishore Dutta, Senior Advocate High Court, Kolkata), রাম্যা হরিহরণ (Ramya Hariharan, Founder at Citadel Law Chambers) এবং প্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় (CO Vice Chair, CII IWN & Associate Director Global OGC, PWC) সমগ্র আলোচনাসভার সঞ্চালনা করেন প্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় একটি শিউরে ওঠার মতো বিষয়ে আলোকপাত করেন৷ তিনি জানান, ৫২ শতাংশ মহিলাই কর্মক্ষেত্রে যৌননিগ্রহের শিকার (UK Fact Finding Data)৷ কাউকে স্পর্শ করা হয়েছে তাঁর বিনা সম্মতিতে৷ 'পশ'-এর কথাও তুলে ধরেন প্রিয়া৷ তিনি এও জানান, প্রতি মুহূর্তে একটা 'কিন্তু' থেকে যায়৷ সেই কিন্তুর কারণে এই হেনস্থার কোনও শাস্তি হয় না৷
advertisement
আরও পড়ুনঃ দুর্গাপুজোতেও চলবে একটানা বৃষ্টি! সপ্তাহান্তে মাটি হবে পুজোর শপিং! জানুন সর্বশেষ পূর্বাভাস
রাম্যা হরিহরণ বলেন, "যৌননিগ্রহর কোনও আলাদা সংজ্ঞা হয় না৷ যে কোনও পরিস্থিতিতে, যে কোনও জায়গায়, যে কোনও রকমভাবে হেনস্থা হতে পারে৷ যে কোনও ধরনের নেতিবাচক বা অস্বস্তিকর ব্যবহার দেখলেই সতর্ক হওয়া জরুরি৷ আপনার সহকর্মীর আপনার সঙ্গে অশালীন ব্যবহার, অশালীন অঙ্গভঙ্গি, অশালীন বাক্যালাপ- সবই কিন্তু যৌননিগ্রহের আওতাতেই পড়ে৷ এমনকি পর্নোগ্রাফি ছবি দেখানোও কিন্তু যৌননিগ্রহ৷ এটা সরাসরিও হতে পারে, পরোক্ষভাবেও হতে পারে৷" তিনি আরও বলেন, "কখনও কখনও এমনটাও হয় যদি আপনি প্রস্তাবে সায় দেন, আপনার পদোন্নতি পাকা৷ যদি না দেন, তাহলে হতে পারে আপনাকে কর্মক্ষেত্র থেকে বরখাস্ত করা হল, শুধু তাই নয়- যেই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আপনি যুক্ত, সেই ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার থাকা মুশকিল হয়ে যেতে পারে৷ এমন ঘটনাও আমাদের সামনে এসেছে৷ সম্মতি সবসময় সবক্ষেত্রে জরুরি৷ মনে রাখা দরকার, কেউ না বলেনি মানে কিন্তু এমন নয় যে সে হ্যাঁ বলেছে৷ প্রসঙ্গত, কর্মক্ষেত্র মানে কিন্তু শুধু সরকারি বা বেসরকারি নয়৷ যে কোনও ক্ষেত্র, যেখানে কাজ হয়, এমনকি দশজনের কম লোককে নিয়ে কাজ হলেও সেটা কিন্তু কর্মক্ষেত্র রূপেই বিবেচিত৷"
আরও পড়ুনঃ চাকরী প্রার্থীদের জন্য বিরাট খবর! পুজোর পরে রাজ্যে প্রাইমারি টেট! মিলল স্পষ্ট আভাস
কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের কথা তুলে ধরলেন কলকাতা হাইকোর্টের অভিজ্ঞ আইনজীবী কিশোর দত্ত৷ জানান, অনেক সময় এমনও হয় যোগ্যতার বিচার না করে পুরুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়৷ যা কোনও ভাবেই কাম্য নয়৷ কর্মক্ষেত্রে যৌনহেনস্থার শিকার হলে সবার আগে অভিযোগ করা উচিত৷ যার অধীনে আপনি কর্মরত বা যিনি সংস্থাটির কর্তা তার কাছে আপনি অভিযোগ করতে পারেন৷ তবে এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাও আসে৷ যেমন আপনার সঙ্গে যে যৌনহেনস্থা হয়েছে সেটা প্রমাণ করা আপনার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়৷ তাও কোনও ক্ষেত্রেই অভিযোগ করা থেকে পিছপা হওয়া কাম্য নয়৷ তিনি স্থায়ী কর্মী হন, অস্থায়ী কর্মী হন, চুক্তিভিত্তিক হন- যে কোনও ক্ষেত্রেই আইন আছে৷ বিশাখা গাইডলাইন সম্পর্কেও বিশদে আলোকপাত করেন কিশোর দত্ত৷ আইন এবংআইনের প্রয়োগ সবটাই উঠে আসে তাঁর মনোজ্ঞ বক্তব্যে৷
আলোচনা চক্রে উঠে আসে, কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌননিগ্রহ যে কোনও কারও দ্বারা হতে পারে৷ জরুরি নয় যে সেটা পুরুষের দ্বারাই হবে৷ অপর কোনও মহিলা সহকর্মী আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অশালীন মন্তব্য করছে, সেটাও হেনস্থা৷ এদিন একটি ছোট সচেতনতামূলক ছবিও দেখানো হয় যার মূল বিষয় ছিল- কর্মক্ষেত্রে যৌনহেনস্থার প্রতিবাদ কীভাবে করা উচিত৷