সোমবার থেকে অফিসে আসেননি ‘মৃত’ অমৃতাভর বোন মহুয়া চৌধুরী পাঠক। শুক্রবার দুপুর অবধি তাঁকে শেষ অফিসে দেখা গিয়েছিল। আর ওই দিন রাতেই অমৃতাভ চৌধুরী ও তাঁর বাবা মিহির চৌধুরীকে আটক করে সিবিআই। তার পরের দিনেই খবর চাউর হতে শিয়ালদহের সিনিয়র ডিভিশনাল সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকম অধিকারিকের অফিসের সবাই জানতে পারেন, তাঁদের দফতরের কর্মী মহুয়া জাল নথি দেখিয়ে চাকরি করছেন দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী তিনি। শিয়ালদহ ডিভিশন সূত্রে খবর, হেল্পার হয়েও বাইরে কাজে না গিয়ে তিনি অফিসের কাজ করতেন। কথা কম বলতেন সহকর্মীদের সঙ্গে। সহকর্মীদের সামনে দম্ভ করে কথা বলতেন, ”রেল কি আমাকে এমনি চাকরি দিয়েছে।” তবে দাদার মৃত্যুতে চাকরি পাওয়ার বিষয়টিকে বরাবর উহ্য রাখতেন তিনি।
advertisement
অনেকেই মনে করছেন, দাদা জীবিত বলে হয়তো তিনি জানতেন। তাই সকলের সামনে সেই কথা হয়তো বলতেন না। শিয়ালদহ ডিভিশনে তার সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, মহুয়া স্বল্পভাষী ছিলেন। অফিসে সবাইকে এড়িয়ে চলতেন তিনি। হেল্পার হয়েও চাকরি নিয়ে দফতরেই থাকতেন আলাদাভাবে। বিভাগের ছুটি, অবসরের কাগজপত্র ড্রিল করতেন। কার্ড পাস তৈরি আনা নেওয়াও করতেন তিনি। তার বিভাগের একাধিক সহকর্মীর বক্তব্য, “খুঁটির জোর আছে। এভাবে চাকরি নিয়েছে। তারপরেও শিয়ালদহে প্রথম পোস্টিং। হেল্পার হয়ে ফিল্ডে কাজের সাহায্য করাই তার কাজ। সেখানে নিজের পদের কাজ না করে অফিসে পিয়নের কাজ করেছে বরাবর। এটা ভালো সোর্স ছাড়া সম্ভব নয়।” যখন চাকরি জীবন শুরু করেন তখন অবিবাহিত থাকলেও এখন বিবাহিত মহুয়া। ১৮ হাজার টাকার বেসিকের পদের বেতন পরিকাঠামোর যোগ দিয়ে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা মাইনে তুলছেন তিনি বলে সহকর্মীদের একাংশের দাবি। যদিও বিতর্কের পর চাকরি ও বোনের মাইনের টাকা ফিরিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন অমৃতাভ। তবে ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া সেই টাকা কীভাবে ফেরাবেন তা স্পষ্ট করেননি ‘মৃত’ অমৃতাভ চৌধুরী। ইতিমধ্যেই সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছেন ‘মৃত’ অমৃতাভর বাবা মিহির চৌধুরী। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাঁর স্যাম্পল নেওয়া হতে পারে। একসঙ্গে অমৃতাভর বয়স নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। ফলে তাঁর প্রকৃত বয়স নির্ধারণে হাড়ের পরীক্ষা বা অসিফিকেশন টেস্ট করা হবে।পূর্ব রেল সূত্রে খবর, এখনও মহুয়ার ব্যাপারে সিবিআই তাদের কাছে কোনও তথ্য চায়নি। ফলে মহুয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত এখনই শুরু করা যাবে না। অন্যদিকে আজও যদি অফিসে তিনি যোগ না দেন তখন খোঁজ খবর নেওয়া হবে। তবে রেল আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, মহুয়া হয়তো জানতেন সত্যিই তাঁর দাদা হয়তো মারা গেছেন বলে জানতেন। আপাতত অমৃতাভ ইস্যুতে সরগরম শিয়ালদহ ডিভিশন।
ABIR GHOSHAL