কুনাল ঘোষ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় এদিন জানান, আলাপনের আগামী ৩১ মে পর্যন্ত কার্যকালের মেয়াদ থাকলেও রাজ্যবাসীর স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা ৩ মাস বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন এবং সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার তাতে সায়ও দিয়েছিল। কুণালের অভিযোগ, বিধানসভা ভোটে হেরে পশ্চিমবঙ্গবাসীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাইছে কেন্দ্র। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘‘ভোটে হারার পরে যত রকম ভাবে নোংরামো করা যায় ওরা (বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার) সেটাই করছে।’’
advertisement
আলাপনের বদলির নির্দেশের পর সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল সাংসদ। প্রসঙ্গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে গরহাজির থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেবল কিছুক্ষণের জন্য দেখা করে ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান দিয়েই দিঘার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান মমতা। এই নিয়েই অভিযোগ ওঠে, কলাইকুণ্ডায় মোদিকে প্রায় আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। আপাত দৃষ্টিতে কাকতালীয় মনে হলেও কার্যত এর পরই আলাপনের বদলি নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। তাই এই নিয়ে কেন্দ্রীর সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ করেছে তৃণমূল। শুক্রবার রাতে মোদির নাম না করে ট্যুইট করেন সংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি লেখেন, ‘৩০ মিনিট অপেক্ষার করানোর অভিযোগ নিয়ে এত হইচই? ভারতীয়রা ১৫ লক্ষ করে টাকা পাওয়ার জন্য ৭ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। এটিএমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। টিকা পাওয়ার জন্য মাসের পর মাস ধরে অপেক্ষায়। মাঝে মধ্যে আপনিও তো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন’।
কেন্দ্রের রাতারাতি আলাপনের বদলির সিদ্ধান্ত বাংলার উপর প্রতিহিংসা থেকেই নেওয়া পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বাম নেতা দীপঙ্কর। কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব দীপঙ্কর ট্যুইটারে লিখেছেন, ‘মোদি সরকার আক্রমণাত্মক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মতো আচরণ করছে। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত একটি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে টেনে আনাটা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ইতিহাসে অত্যন্ত নিম্নরুচির। সমস্তটাই বাংলার মানুষকে শাস্তির দেওয়ার জন্য, যেখানকার মানুষজন মো-শা (নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ)-এর বাংলা দখলকে রুখে দিয়েছে’।
বিজেপি নেতা, সায়ন্তন বসু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই বিষয়টির সঙ্গে আমরা যুক্ত নয়। এটা রাজনীতির বিষয়ই নয়। পুরোপুরি প্রশাসনিক বিষয়। এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার জড়িত।’’ তবে সেই সঙ্গেই তাঁর যুক্তি, আইএএস আধিকারিকেরা আদতে কেন্দ্রের অধীনেই কাজ করেন। জল কোনদিকে গড়ায় সেই দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। তবে নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পথে হাঁটতে পারে রাজ্য সরকার।
প্রসঙ্গত, ৯৮৭ সালের ব্যাচের আইএএস (IAS) আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম ‘আস্থাভাজন’ আমলা। দীর্ঘ প্রশাসনিক জীবনে একাধিকবার বিভিন্ন সমস্যা থেকে সরকারকে বের করে এনেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব হিসেবে গত বছর অক্টোবর মাসের ১ তারিখে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তার আগে স্বরাষ্ট্র দফতরের সচিব ছিলেন। মে মাসে আলাপনের ৬০ বছর বয়স হয়েছে। তাই চলতি মাসেই চাকরি থেকে অবসর নেওয়া কথা ছিল তাঁর। তবে তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে আবেদন জানান, কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় আলাপনের মতো দক্ষ আমলা প্রয়োজন রাজ্যের। মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে এরপর আলাপনের মেয়াদ বৃদ্ধিতে অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।