#কলকাতা: লকডাউনের দোসর কালবৈশাখী। এই দুইয়ের জেরে দূষণহীন কলকাতা। দূষিত নগরীর তকমা পাওয়া কলকাতা গত কয়েক দিনে "সবুজ" হয়ে উঠেছিল। এবার কালবৈশাখী আর বৃষ্টির ছোঁয়ায় দূষণকে জব্দ করে ফেলা গিয়েছে সফলভাবে। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম, লকডাউনের জেরে মহানগর জুড়ে এখন শুধুই অক্সিজেন। বুধবার শহরের একাধিক অফিস খোলা। রাস্তায় চলছে গত কয়েকদিনের চেয়ে বেশি ছোট গাড়ি। যদিও দূষণের গড় মাত্রা বুধবার পলিউশন ইনডেক্স মিটারে ‘GOOD’ হিসাবেই রয়েছে।
advertisement
দীপাবলির সময় থেকেই শহরে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বায়ু দূষণের মাত্রা। পরিসংখ্যান বলছে দূষণের গ্রাফ চড়চড় করে বাড়তে শুরু করে শীতকাল এসে পড়লেই। বাঙালির নতুন বছর আসা অবধি সেই দূষণের রেশ বজায় থাকে। মাঝ এপ্রিল অবধি চলতে থাকা সেই দূষণ একেবারে কমে গিয়েছে গত কয়েক দিনের হিসেবে। আর মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই দূষণ এখন গ্রিন জোনে। বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধুলিকণার মাত্রা কমতে শুরু করায় খুশি পরিবেশবিদরা। শহরের দূষণ যেখানে সবচেয়ে বেশি থাকে, সেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে বুধবার বায়ুদূষণের মাত্রা গড় হিসেবে ছিল ৩৪ মাইক্রোগ্রাম। রবিবার ছিল ৩০ আর শনিবার তা কমে দাঁড়ায় ২৯ মাইক্রোগ্রাম।
ঠিক পাশেই ফোর্ট উইলিয়াম । সেখানে বুধবার ছিল ৩৯ মাইক্রোগ্রাম। রবিবার কমে দাঁড়ায় ৩০ মাইক্রোগ্রাম আর শনিবার এক ধাক্কায় তা কমে আসে মাত্র ২৮ মাইক্রোগ্রামে। দক্ষিণের অন্যতম দূষিত জায়গার তকমা পাওয়া রবীন্দ্রসরোবর। সেখানে বুধবার দূষণ ছিল ২৮ মাইক্রোগ্রাম। রবিবার তা হয়ে যায় ২৭ মাইক্রোগ্রাম আর শনিবার তা ছিল ২৮ মাইক্রোগ্রাম। দক্ষিণের অন্যতম দূষিত জায়গা বালিগঞ্জ। বুধবার র সেখানে দূষণ ছিল ৩৭ মাইক্রোগ্রাম। রবিবার তা হয় ২৮ মাইক্রোগ্রাম আর শনিবার তা ছিল ২৯ মাইক্রোগ্রাম। দক্ষিণের অন্যতম দূষিত জায়গা যাদবপুরের দূষণের চেহারা বুধবার ছিল ৩২ মাইক্রোগ্রাম। রবিবার তা হয়ে যায় ২৯ মাইক্রোগ্রাম আর শনিবার তা হয় ৩০ মাইক্রোগ্রামে। সল্টলেক এলাকার দূষণ বুধবার ছিল ৩৪ মাইক্রোগ্রাম। শনিবার তা কমে হয়েছিল ২৮ মাইক্রোগ্রাম আর রবিবার ছিল ২৯ মাইক্রোগ্রাম।
উত্তরের সবচেয়ে দূষিত এলাকা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। বুধবার সেখানে দূষণ ছিল ২৮ মাইক্রোগ্রাম। রবিবার ছিল ২৮ মাইক্রোগ্রাম আর শনিবার তা ছিল ২৮ মাইক্রোগ্রাম। বুধবার সকাল থেকেও গড় দূষণ মাত্রা কোথাও ৩২ মাইক্রোগ্রাম পেরোয়নি। ফলে করোনার জেরে যে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে তাতে ক্রমশ কমছে শহরের দূষণ চিত্র। কিন্তু এক ধাক্কায় দূষণ কমল কী করে? পরিবেশবিদদের ব্যখ্যা রাস্তায় গাড়ি চলাচল ভীষণ রকম কমে গিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত লকডাউনের জেরে গাড়ি চলাচল করেনি। ফলে ডিজেল থেকে দূষণ ছড়ানোর কোনও আশঙ্কা নেই। অন্যদিকে রাস্তায় লোক বেরোচ্ছে কম। বেশিরভাগ অফিস হয়ে গিয়েছে ‘ওয়াক ফ্রম হোম’ । ফলে রাস্তার খাবারের দোকানের উনুন জ্বলছে কম। তা থেকেও দূষণ ছড়াচ্ছে কম।
এরই মধ্যে মাঝে কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে দূষণ মাত্রা কমতে শুরু করে দিয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বেশ কয়েকটি অফিস খুলে যাওয়ার কারণে শহরে গাড়ির সংখ্যা অল্প বেড়েছে তাতেও দূষণ মাত্রা ৩৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হয়নি। সাধারণত শনিবার ও রবিবার রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা ভীষণ কম। কিন্তু কাজের দিনে বুধবার দূষণের মাত্রা দেখে খুশি পরিবেশবিদরা। বৃষ্টি চলতে থাকায় শহরের পরিবেশ সুস্থ থাকবে বলে মত তাঁদের। করোনার সংক্রমণের ভয়ে রাস্তায় লোক কম বেরোতেই সবুজ হল শহর। পরিবেশবিদদের বক্তব্য আগামী কয়েক দিন শহর এই লকডাউন ও বৃষ্টির যুগলবন্দী পেলে অনেক রোগ ঠেকানো সম্ভব হবে।