তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ২০২১ এর নির্বাচনে ফল বেরনোর পর রাজ্যে যে ' সন্ত্রাস ' হয়েছিল তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রের পাঠানো প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন বর্তমান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।
বাংলায় হাতেখড়ি থেকে বিধানসভায় ভাষন - রাজ্যপালকে সতর্ক করে বিরোধীদলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'আপনি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ফাঁদে পড়বেন না।' শুক্রবার বিরোধী দলনেতার অনুপস্থিতিতে তারই বেঁধে দেওয়া সুরে সুর মিলিয়ে বিধানসভায় রাজ্যপালকে নিশানা করলেন অগ্নিমিত্রা।
advertisement
আরও পড়ুন: 'ক্যামাক স্ট্রিটের দরজায়' আরও ১৩ বিজেপি বিধায়ক? শুভেন্দুকেই হুঁশিয়ারি তৃণমূল মুখপাত্র সুদীপের
অগ্নিমিত্রা বলেন, 'হাতেখড়ির আগের আনন্দ বোসের সঙ্গে রাজ্যপাল আনন্দ বোসের কোনও মিল নেই। তিনি বদলে গিয়েছেন।' মিল যে নেই, তা বোঝাতে অগ্নিমিত্রা ২১- এর বিধানসভা ভোট পরবর্তী ঘটনায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের দলের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে বলেন, '২০২১-র ২ মের পর রাজ্যের ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন বর্তমান রাজ্যপাল। ওই প্রতিনিধিদলের রিপোর্টে রাজ্যে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তাকে সরাসরি দায়ী করে বলা হয়েছে, পুলিশ, প্রশাসন আরও একটু তৎপর হলে হতাহতের সংখ্যা কিছুটা কম হত।'
শুধু তাই নয়, অগ্নিমিত্রা আরও বলেন, তদন্ত করতে এসে পুলিশ, প্রশাসনের থেকে তারা যে কোন সহযোগিতা পাননি সেই অভিযোগও ছিল রিপোর্টে। অথচ, তিনিই রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর ভাষনে রাজ্য সরকারের আইন শৃঙ্খলার কীভাবে প্রশংসা করেন? রাজ্যপালের ভাষনে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার প্রশংসা করা হয়েছিল। ভাষনের ওই অংশ রাজ্যপাল পড়তেই শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা সদনে হৈ চৈ জুড়ে দেন। এর পর প্রায় ১৫ মিনিট ধরে লাগাতার বিক্ষোভ, প্রতিবাদ চালিয়ে শেষপর্যন্ত সদন থেকে ওয়াক আউট করে বিজেপি। ওয়াক আউটের সময় শুভেন্দু ও বিজেপি বিধায়করা রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে 'শেম, শেম' ধ্বনিও দেন। এই প্রসঙ্গেই আজ রাজ্যপালের হাতেখড়িকে টেনে এনে কটাক্ষ করেছেন অগ্নিমিত্রা।
আরও পড়ুন: বাজেট অধিবেশনের আগে বিধানসভায় রাজ্যপালের মুখে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ
'বদলে যাওয়া' আনন্দ বোসের উপরে বেজায় ক্ষুব্ধ বিজেপি হাতেখড়িতেই থেমে না থেকে তাঁর সঙ্গে তুলনায় টেনে এনেছেন প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ভূমিকাকেও। রাজ্যপালের ভাষনে রাজ্য সরকারের প্রশংসাকে কটাক্ষ করে অগ্নিমিত্রা বলেন, 'রাজ্যের সর্বক্ষেত্রে দূর্নীতি আর রাজ্যপালের ভাষনে শুধু ভাল ভাল কথা। আসলে, ওনার সৌজন্য বোধ একটু বেশি। নাহলে হয়ত উনি আগের রাজ্যপাল ধনকড়ের মতো ভাষন টেবলড করে উঠে চলে যেতেন।'
যা শুনে তৃণমূলের তাপস রায় বলেছেন, 'আসলে এটাই ওদের মনের কথা। শুভেন্দু, অগ্নিমিত্রারা চেয়েছিলেন, ধনকড়ের মতো হবেন আনন্দ বোস৷ আর, রাজ ভবনটা হবে বিজেপির দ্বিতীয় রাজ্য দফতর। কিন্তু, বাস্তবে তা হয়নি। সেই হতাশা থেকেই ওঁরা এসব বলছেন। "
রাজ্যপালের ভাষন বিতর্ক শেষ হবে আগামী সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর জবাবি ভাষন দিয়ে। তার আগে ভাষনে অংশ নেওয়ার কথা বিরোধী দলনেতারও। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেদিন রাজ্যপাল ভাষন বিতর্কে শুভেন্দু - মমতার যূগলবন্দি আরও আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে নিশ্চয়ই। কিন্তু, শুভেন্দুর অনুপস্থিতিতে বিরোধিতার সুর বেঁধে দিয়ে গেলেন অগ্নিমিত্রাই।