দইঘাট থেকে গড়িয়া স্টেশন। দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৭ কিলোমিটার। একদিকে জবরদখল, অন্যদিকে, দূষণ। দুইয়ের জোড়া ফলায় দীর্ঘদিন ধরেই অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পড়ে রয়েছে টালিনালা। বহু চেষ্টা করেও পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফেরাতে পারেনি কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য সরকার। যার ফল ভুগতে হচ্ছে আদিগঙ্গার দু'ধারে থাকা কলকাতা ও সোনারপুর পুরসভা ৩১টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।
advertisement
আরও পড়ুন: বর্ষশেষে বিরাট পরিবর্তন, হতে পারে বৃষ্টি! যা জানাল হাওয়া অফিস...
কলকাতা কর্পোরেশন বিক্ষিপ্তভাবে কিছু এলাকায় টালিনালার সংস্কার করলেও বড় ধরনের কোনও সংস্কারের কাজ করা হয়নি। নিয়মিত সংস্কারের অভাবে পরিবেশ ক্রমাগত দূষিত হয়েছে। অবশেষে, নানা টালবাহানার পরে টালিনালার আমূল সংস্কার কাজ শুরু হচ্ছে নমামি গঙ্গে প্রকল্পে। এই খাতে ৬৬৪ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এই সংস্কারের কাজ করতে সময় লাগতে পারে ৩০ মাস।
গঙ্গা থেকে টালি নালার বা আদি গঙ্গার শুরু হয়েছে দই ঘাটে। দই ঘাট থেকে বিদ্যাধরী নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটার আদি গঙ্গার দৈর্ঘ্য। এক সময় এই পথেই বয়ে যেত নদীর মূল স্রোত। পরে পথ পরিবর্তনে প্রবাহ কমে। সেই সময় এই আদি গঙ্গার খনন কাজ করেন উইলিয়াম টালি। তার নামেই টালি নালা বলে আদি গঙ্গা পরিচিতি।
আরও পড়ুন: কখন শুরু হবে স্কুল, কতক্ষণ ক্লাস? নির্দেশিকা মধ্য়শিক্ষা পর্ষদের, কড়া গাইডলাইন
২০ শতক থেকেই এই আদিগঙ্গার দুপাশের গড়ে উঠতে থাকে বসতি। নদীর পাড়েই গড়ে ওঠে খাটাল। বাসিন্দাদের ব্যবহার করা বর্জ্য জমা পড়তে থাকে এখানে। মিশতে থাকে দূষিত জল। একসময় দূষণ ঠেকাতে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান নেওয়া হয়। সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় আদি গঙ্গায় আরও দূষণ বাড়ে। এর পর রাজ্যের আর্থিক সহায়তা ও কর্পোরেশনের উদ্যোগে অল্প বিস্তর কাজ শুরু হয় সম্প্রতি।
কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, নদীর পাড় খাটাল মুক্ত করা। ইতিমধ্যেই ৮০টি ঘাটের সংস্কার করা হয়েছে। ৩০টি ক্রশ ব্রিজের উপর নেট লাগানো হয়েছে। কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে ছোটখাটো সংস্কারের কাজও চলছে।
আদিগঙ্গার ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে ১৭ কিলোমিটার কলকাতা পুরসভার আওতাধীন। যার দুপাশের কলকাতার ২৮টি ওয়ার্ড ও সোনারপুর পুরসভার ৩টি ওয়ার্ড রয়েছে। রাস্তা রয়েছে ৩২ বর্গ কিলোমিটার। আদিগঙ্গার আমূল সংস্কার হলে, এই গোটা এলাকার পরিবেশগত উন্নয়ন হবে। ৬ লক্ষেরও বেশি বাসিন্দার আশপাশের পরিবেশই বদলে যাবে।
আদিগঙ্গা সংস্কারের জন্য প্রথম পর্যায় ৯৩৪ কোটি টাকার বিস্তারিত প্রকল্প তৈরি করেছিল কলকাতা কর্পোরেশন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় জল শক্তি মন্ত্রকের অধীন নমামি গঙ্গে আওতাভুক্ত করানোর জন্য পাঠানো হয়। চলতি মাসে গত ২৩ ডিসেম্বর ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার ৪৬ তম কার্যনির্বাহী বৈঠকে এউ কাজে ৬৫৪ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়।
নমামি গঙ্গা প্রকল্পে আদি গঙ্গার কাজের খতিয়ান-
কী কী হবে এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক-
★ব্রীজি রোড, বাঁশদ্রোণী, গল্ফগার্ডেনে তিনটি বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট
★৫০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ নিকাশি পাইপ লাইন
★১২ টি নতুন ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন
★১১ টি পাম্পিং স্টেশনের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ
★সেমি অটোমেটিক নতুন ৬ টি পেন স্টক গেট বসানো হবে। ৬৮ টি পুরনো গেটের সংস্কার
★৪ টে ট্রেসল ব্রিজ তৈরি
এই সমস্ত কাজ শেষে হলে আগামী ১৫ বছর এই সমস্ত বিষয় বৈজ্ঞানিকভাবে নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।