৮৪ নম্বর বউবাজার স্ট্রিট। ঠিক বউবাজার ক্রশিংয়ের সঙ্গেই এই বউবাজার মার্কেট। এই এলাকায় বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি বাড়ির বেশ কিছুটা অংশ। বাড়িটি মুচিপাড়া থানায় হলেও ফুটপাথের অংশটি বউবাজার থানায়। এই ফুটপাথের অংশের উপরেই রয়েছে গাড়ি বারান্দার মতো ঝুল বারান্দা। এই ঝুল বারান্দা থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছিল আগেও। শুক্রবার সকালে তারই পুনরাবৃত্তি হল। মাঝে মাঝেই এই পলেস্তারা খসে পড়ার অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন ব্যবসায়ী থেকে নিত্য বাজারে আসা ব্যক্তিরা।
advertisement
প্রত্যক্ষদর্শী ইরা নন্দি এদিন নাতিকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন। আচমকাই তাঁর কিছুটা সামনে ভেঙে পড়ে গাড়ি বারান্দার অংশ। বিপজ্জনক বাড়ি হওয়ায় এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছিলেন তিনি। কিন্তু চোখের সামনে বাড়ি ভাঙার দৃশ্য দেখে রীতিমতো আঁতকে ওঠেন। ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে করে এদিন তিনি বলেন, "ভগবানের অশেষ কৃপা কারও মাথার উপর পড়েনি। যে কোনও মানুষের মাথার উপরে পড়লেই অঘোরে প্রাণটা হারাত। অনেক স্কুলের বাচ্চারা ওই পথে যাচ্ছিল। বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে ভগবান বাঁচিয়ে দিল সবাইকে।" এরপরেই সিনিয়র সিটিজেন ওই বৃদ্ধার প্রশ্ন, "এরকম বিপজ্জনক বাড়ি থাকতেও পুরসভা কিছু করেনি কেন?"
ঘটনার খবর পেয়েই এলাকায় যান কলকাতা পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তিনি বলেন, "পুরসভা থেকে বিল্ডিং বিভাগের ডিমোলেশন টিম এসে সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলেছে। বিপজ্জনক ভাবে যে পিলারগুলো দাঁড়িয়েছিল সেগুলো সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লোহার বিম স্ট্রাকচার ঠিক করা হয়েছে। বড় ধরনের কাজ রয়েছে সেগুলো রাতের বেলায় সম্পূর্ণ করবে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ।"
কাউন্সিলর আরও বলেন, "এই বাড়ি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই শরিকি বিবাদ চলছে আদালতে। অবিলম্বে সংস্কার না করলে এই ধরনের বাড়ি থেকে যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।"
ঘটনার পরেই এ নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন, গাড়ি বারান্দার সংস্কার না করলে কলকাতা পুরসভা এবার নিজেরাই তা ভেঙে দেবে। কারণ, শহরের ফুটপাথে এ জন্য যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
কলকাতা পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে এরকম অনেক বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। শুধু বউবাজারের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কেন, উত্তর কলকাতার বেশিরভাগ পুরনো বাড়িরই বেহাল দশা। কোথাও মালিক-ভাড়াটে বিবাদ কোথাও আবার শরিকি বিবাদে বেহাল অবস্থায় দাঁড়িয়ে শতাব্দী প্রাচীন বাড়িগুলি। তাই আইনি জটিলতায় বিপদ বাড়ছে কলকাতার রাজপথে ফুটপাথে।