চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভাইরাল নিউমোনিয়ার জন্য আরিয়ভের দুটো ফুসফুসই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ইকমো টিমের নেতৃত্বে ছিলেন ডা. দীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ৷ যিনি ইকমো ফিজিশিয়ান এবং মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্ট। ধীরে ধীরে আরিয়ভের ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি হয় এবং ১৮ দিন পর ইকমো সাপোর্ট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাকে ৷ গত ২ মার্চ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় আরিয়ভ ৷
advertisement
পাঁচ দিন ধরে সর্দি জ্বরে ভুগছিল আরভ। এর সঙ্গে গত ২৯ জানুয়ারি শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। প্রথম থেকেই চিকিৎসার মধ্যে থাকলেও আরিয়ভের স্বাস্থ্যের অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। এই অবস্থায় আরিয়ভের বাবা মা তাকে নিকটবর্তী একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করেন। সেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার পরেও দেখা যায় যে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল কমে যেতেই থাকছে। এই অবস্থায় নার্সিং হোমের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয় তাকে ইএম বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য যেখানে বিশেষজ্ঞ পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট রয়েছে। হাসপাতালে সর্বাধিক ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়ার সত্ত্বেও দেখা যায় যে শিশুর অক্সিজেন স্যাচুরেশনের কোনও উন্নতি হয়নি। এই অবস্থায় গত ৩০ জানুয়ারি রাত দুটোর সময় ওই বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে মেডিকার ইকমো টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় পেডিয়াট্রিক ইকমো সাপোর্টে শিশুকে ভর্তি নেওয়ার জন্য।
ইকমো টিম দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভাইরাল প্যানেল টেস্ট পরীক্ষার ফলে নিশ্চিত হওয়া যায় অ্যাডিনোভাইরাস ও রাইনোভাইরাস সম্পর্কে। এ ছাড়া শিশুটি স্ট্রেপটোককাস নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়েছিল ৷ যার ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। শিশুটিকে ভি ভি ইকমো (ভেনো ভেনাস ইকমো) সাপোর্ট দেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে সামাল দেওয়ার পর ট্রাকিওস্টমি (একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে গলার সামনে গর্ত করা হয় যাতে ট্রাকিয়াতে একটি টিউব ঢোকানো যায় শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য) করা হয়। ১৮ দিনের জীবন মৃত্যুর লড়াইয়ের পর ইকমো সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়। তারপর আরও সাত দিন পর যখন স্যাচুরেশন লেভেল স্বাভাবিক হয়, তখন তার অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন হোলির আগেই উদয় হয়েছেন ন্যায়দাতা শনিদেব! ভাগ্য খুলবে এই ৫ রাশির জাতক-জাতিকার
প্রায় এক মাসের উপর হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর, গত ২ মার্চ শিশুটিকে ডিসচার্জ করা হয় ৷ ডা. দীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, যিনি ইকমো টিমকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি জানান, ‘‘এই হাসপাতালে সবচেয়ে আধুনিক পেডিয়াট্রিক ইকমো ব্যবস্থা রয়েছে, যা অনেক শিশুর প্রাণ বাঁচাতে পারে, যারা অ্যাডিনোভাইরাসের আক্রমণে নাজেহাল। ইকমোর সাহায্যে এখন আরিয়ভ সম্পূর্ণ সুস্থ। ওর পরিস্থিতি সঙ্কটজনক ছিল, কারণ ভাইরাসের আক্রমণে দুটো ফুসফুসই আক্রান্ত হয়েছিল। এর ফলে অক্সিজেন সাপোর্ট থাকার সত্ত্বেও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তবে পেডিয়াট্রিক ইকমোর সাহায্যে ধীরে ধীরে ফুসফুসের উন্নতি হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়। তবে এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব হয়েছে কারণ দ্রুত শিশুটিকে হাসপাতালে আনা গিয়েছে, সময়মতো ইকমোর ব্যবহার করা গিয়েছে এবং অত্যাধুনিক ক্রিটিক্যাল কেয়ারের সুবিধা পাওয়া গিয়েছে। আমরা আরিয়ভের পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ, তাদের সাহায্য এবং সহযোগিতার জন্য এই কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে।"