ফলে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইজরায়েলের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার ডুমসডে প্লেন নামে পরিচিত এক মার্কিন সামরিক বিমানকে আকাশে দেখতে পাওয়ার পর তা সম্ভাব্য বৃহৎ আকারের সংঘাতের জন্য ওয়াশিংটনের প্রস্তুতি নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। E-4B নাইটওয়াচ নামে পরিচিত এই বিমানটি পারমাণবিক হামলার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত সামরিক ও রাজনৈতিক কমান্ড বজায় রাখার জন্য তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। হঠাৎ করে এর উড়ানের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
advertisement
E-4B নাইটওয়াচটি লুইসিয়ানার বার্কসডেল বিমান ঘাঁটি থেকে সন্ধ্যা ৬টার আগে যাত্রা শুরু করে এবং চার ঘন্টারও বেশি সময় ধরে আকাশে থাকার পর রাত ১০টার কিছু পরেই মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজে অবতরণ করে। ফ্লাইটটি ORDER6-এর বদলে একটি নতুন কলসাইন ‘ORDER01 ব্যবহার করে, এটি আগে কখনও ব্যবহার করা হয়নি। এই ঘটনাও যুদ্ধের জল্পনাকে তীব্র করে তুলেছে।
আমেরিকা কি তাহলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে?
যদিও E-4B বিমান নিয়মিতভাবেই অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করার জন্য উড়ে বেড়ায়, তবে এখন এই নির্দিষ্ট যাত্রাটি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে আলাদা মাত্রা পেয়েছে। বিমানটির যাত্রা রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের কাছ থেকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের’ দাবির সঙ্গে মিলে যায় এবং ইজরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, “এই দেশ কারও কাছে আত্মসমর্পণ করবে না- যুদ্ধে নয়, চাপিয়ে দেওয়া শান্তি প্রস্তাবের অধীনেও নয়।” এই বিবৃতিও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিরই ইঙ্গিত দেয়।
‘ডুমসডে প্লেন’ কী?
E-4B নাইটওয়াচ, যা সাধারণত ‘ডুমসডে প্লেন’ বা ‘ফ্লাইং পেন্টাগন’ নামে পরিচিত, একটি নিরাপদ মোবাইল কমান্ড সেন্টার হিসেবে কাজ করে যা পারমাণবিক আক্রমণ এবং ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস সহ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ৬৭টি স্যাটেলাইট ডিশ এবং অ্যান্টেনা দিয়ে সজ্জিত এই বিমান বিশ্বব্যাপী যোগাযোগে সক্ষম এবং জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় রাষ্ট্রপতি, প্রতিরক্ষা সচিব এবং উর্ধ্বতন সামরিক নেতাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করে।
বিমানটিতে তিনটি ডেক রয়েছে, যার মধ্যে একটি ব্রিফিং রুম, একটি স্ট্র্যাটেজি কনফারেন্স রুম, একটি কমিউনিকেশন জোন এবং বিশ্রামের জন্য ১৮টি বাঙ্ক রয়েছে। এটি ৩৫ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বাতাসে থাকতে পারে, উড়ানের সময়েও জ্বালানি ভরার ক্ষমতা একে এই শক্তি দেয়।
এটি আগে কখন সক্রিয় ছিল?
অতীত বলছে, E-4B নাইটওয়াচ উল্লেখযোগ্য সঙ্কটের সময়ে সক্রিয় ছিল। রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ ৯/১১-এর সময় একই রকম একটি বিমান ব্যবহার করেছিলেন এবং ১৯৯৫ সালে, হ্যারিকেন ওপালের সময় FEMA (ফেডারেল এমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি) দলকে এতে পরিবহন করা হয়েছিল। আকাশে ডুমসডে প্লেন দেখা সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি আসন্ন সঙ্কটের ইঙ্গিত দেয়। ফলে, এবার এর উড়ান কেবল একটি অনুশীলন অভিযান ছিল না কি আরও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পূর্বাভাস ছিল তা আপাতত দেখার বিষয়। তবে, ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কোনও পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত বুঝতে অসুবিধা নেই।