তিনি আরও বলেন, ‘‘বেগম খালেদা জিয়া শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর অবদান, তাঁর দীর্ঘ সংগ্রাম এবং তাঁর প্রতি জনগণের আবেগ বিবেচনায় নিয়ে সরকার চলতি মাসে তাকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে।’’ প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর আপসহীন নেতৃত্বের ফলে গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে জাতি বার বার মুক্ত হয়েছে, মুক্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছে। দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’’
advertisement
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতায় থাকা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শোকবার্তা দিয়েছেন৷ নিজের শোকবার্তায় শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘‘বিএনপি চেয়ারপার্সন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। খালেদা জিয়ার প্রয়াণ বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। জাতির প্রতি তাঁর অবদান ভোলার নয়। আমি বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার শান্তি কামনা করছি৷’’
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি খালেদা জিয়ার আজীবন ত্যাগ এবং দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদানের কথাও স্মরণ করেন।
আরও পড়ুন – Khaleda Zia Death Reason: দীর্ঘদিন নানা রকম ব্যধি শরীরে বাসা বেঁধেছিল, কোন কারণে মৃত্যু হল খালেদা জিয়ার
বেশ কিছুদিন যাবৎ অবস্থার অবনতি হচ্ছিল প্রবীণ নেত্রীর। লড়াই করছিলেন চিকিৎসকরা। তবে শেষরক্ষা হল না। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয়েছে পদ্মাপারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর।
অশীতিপর বিএনপি নেত্রীর শারীরিক পরিস্থিতি গত কয়েক দিন ধরেই সঙ্কটজনক ছিল। রাজধানী ঢাকার হাসপাতালে সিসিইউ-তে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালেই মৃত্য়ু হয় তাঁর। সংবাদ সংস্থা, প্রথম আলো সূত্রে খবর, বিএনপির চেয়ারপারসন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে জানিয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাঁকে জানিয়েছেন, ‘আম্মা আর নেই।’
বেশ কিছুদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষার পর ফুসফুসে সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। সূত্রের খবর, বয়সজনিত কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছিল। কারণ, তাঁর শরীরে আগে থেকেই একাধিক সমস্যা ছিল।
সোমবারই খালেদার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যেরা জানিয়েছিলেন, বিএনপি নেত্রীর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। নিয়মিত ডায়ালিসিসও চলছিল। সোমবার রাতেও মাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন খালেদা-পুত্র তারেক। তার আগে বিএনপি দফতরের সামনে থেকে খালেদার আরোগ্যকামনায় প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছিলেন তিনি।
শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসাবে যেমন বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন হাসিনা, তেমনই খালেদার পরিচিতি ছিল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসাবে। স্বামীর মৃত্যুর পর অবশ্য নিজেই নিজের পরিচিতি তৈরি করেছিলেন খালেদা। হাল ধরেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পার্টি (বিএনপি)-র। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা।দু’দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন খালেদা। প্রথম বার ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত। দ্বিতীয় এবং শেষ বার ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত।
