একজন মা, তিনি চিকিৎসক, যিনি প্রতিদিন নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের প্রাণ বাঁচাতে ছুটে যেতেন, একদিন সেই জীবনটাই তাঁর সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। সকালবেলা ডাঃ নাজ্জার কাজে গিয়েছিলেন গাজার হাসপাতালে। কয়েক ঘণ্টা পরেই সেখানে এসে পৌঁছয় সাতটি দগ্ধ শিশুর মৃতদেহ। সেই শিশুরা আর কেউ নয়, ডাঃ নাজ্জারের নিজের সন্তান। গাজা সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, তাঁদের বাড়িতে ইজরায়েলি বিমানহানায় এই শিশুরা নিহত হয়েছে। সবচেয়ে বড় সন্তানটির বয়স ছিল ১২, সবচেয়ে ছোটটি ছিল মাত্র তিন বছর বয়সী। আরও দু’টি শিশু — একটি সাত মাসের এবং একটি দু’বছরের — ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ছিল।
advertisement
রাতে হাওড়ার দিকে ছুটছিল ট্রেন, AC কোচে টহল দেওয়ার সময় RPF-এর চোখে পড়ল ‘অদ্ভুত’ এই জিনিস! এগুলো কী?
ভারী ব্যাগ নিয়ে ট্রেনে উঠছিলেন, RPF এসে বলল ‘ব্যাগে কী?’ মহিলার উত্তর, ‘পারসোনাল’… তার পর যা হল!
CNN-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ডাঃ নাজ্জারের একটি মাত্র সন্তান এখন জীবিত, সেও মারাত্মকভাবে আহত। তাঁর স্বামী, যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক, তিনিও এই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, এই হামলা হয়েছে খান ইউনিস এলাকার তাঁদের বাড়িতে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ওই এলাকায় তাদের সৈন্যদের কাছাকাছি কোনও সন্দেহভাজনদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। তবে বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
গাজা সিভিল ডিফেন্স হামলার জায়গা থেকে একটি হৃদয়বিদারক ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, একজন আহতকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছে মেডিক্যাল টিম, কেউ কেউ জ্বলন্ত বাড়ির আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে একে একে তুলে আনা হচ্ছে দগ্ধ শিশুদের মৃতদেহ, সাদা চাদরে মোড়া — এই দৃশ্য যে কারও হৃদয় ভেঙে দিতে পারে।
হাসপাতালে বাকিদের প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলেন চিকিৎসক, সেখানেই এল তাঁর ৯ সন্তানের দেহ!
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল মুনির আল-বারাশ জানিয়েছেন, ডাঃ নাজ্জারের স্বামী বাড়ি ফিরেছিলেন, ঠিক সেই সময়েই হামলা হয়। তাঁর চিঠিপত্র থেকে জানা গেছে, তাঁদের নিহত সন্তানদের নাম — ইয়াহিয়া, রাকান, রাসলান, জিবরান, ঈভ, রিওয়াল, সায়েদান, লুকমান এবং সিদরা। তাঁর স্বামী ICU-তে। মুনির লিখেছেন, “এই আমাদের চিকিৎসাকর্মীদের বাস্তবতা। এই যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।” শুধু স্বাস্থ্যকর্মীরাই যে লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন তা নয়, গাজায় ইজরায়েলি আগ্রাসন ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবারগুলিকে।
ডাঃ নাজ্জারের কাহিনি গাজার সংঘাতের নির্মম সত্যকে সামনে এনে দেয়। একদিকে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করতেন অন্যের প্রাণ বাঁচাতে, আর অন্যদিকে তাঁর নিজের সংসার ধ্বংস হয়ে গেল। তাঁর সন্তানের হাসি, স্বপ্ন — সব কিছু ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে গিয়েছে। যে একটি সন্তান এখনও বেঁচে আছে, সে-ও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁর স্বামী হাসপাতালের শয্যায়, হয়তো আর কখনও স্ত্রীকে বলতে পারবেন না, সেই দিন কী হয়েছিল।
এই ঘটনা গাজার সাধারণ মানুষের অসহ্য যন্ত্রণাকে প্রকাশ করে — যেখানে প্রতিদিন কাটে মৃত্যু আর আতঙ্কের ছায়ায়। ডাঃ নাজ্জারের মতো মায়েরা যাঁরা অন্যের প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের জীবন বাজি রাখেন, তাঁরাই আজ তাঁদের নিজেদের পরিবারকে হারানোর শোক বয়ে বেড়াচ্ছেন।