৬৪ বছর বয়সি এই রক্ষণশীল নেত্রী তাঁর কট্টর চিন-বিরোধী অবস্থান এবং কঠোর জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের জন্য পরিচিত। বিবিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, নিম্নকক্ষে তিনি ৪৬৫ আসনের মধ্যে ২৩৭ ভোট পান, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার সীমা অনায়াসে পেরিয়ে যায়।
উচ্চকক্ষেও সামান্য ব্যবধানে জিতেছেন তাকাইচি—১২৫ ভোট, যা সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের চেয়ে এক বেশি।
advertisement
উৎসবের রাত আতসবাজি, সেলফিতে মজে…ট্রেনের হর্ন শুনতে পেল না কেউ! পিষে গেল ৬১ প্রাণ!
থ্যাচার অনুপ্রেরণা, তিনবারের চেষ্টায় সাফল্য
তাকাইচির রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলেছে ব্রিটেনের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। তাঁকে আদর্শ মানেন তাকাইচি। ২০১৩ সালে এক সিম্পোজিয়ামে থ্যাচারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তিনি।
সেই সময় থেকেই তাকাইচি প্রায়ই বলেন, “আমি থ্যাচারের দৃঢ় বিশ্বাস আর নারীত্বের উষ্ণতা—দুই-ই অনুসরণ করতে চাই।”
দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াইয়ের পর অবশেষে সফল হলেন তিনি। ২০২৫ সালের ৪ অক্টোবর লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)-এর সভাপতি নির্বাচিত হন তাকাইচি। এর আগেও দু’বার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। তৃতীয়বারেই ভাগ্য বদল। পার্টির নেতৃত্ব পেয়ে সংসদীয় ভোটে জিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হন তিনি।
কে সানায়ে তাকাইচি?
সানায়ে তাকাইচি পূর্বে ছিলেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।
তিনি বারবার বলেছেন, রাজনীতিতে তাঁর অনুপ্রেরণা থ্যাচার হলেও তাঁর শিকড় একেবারে সাধারণ জীবনে। তাঁর বাবা ছিলেন এক গাড়ি কারখানার কর্মী, মা ছিলেন পুলিশ অফিসার — যা জাপানের রাজনৈতিক পরিবারে এক বিরল উদাহরণ।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এমন সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে এলডিপির শীর্ষে পৌঁছনো তাকাইচির উত্থান জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ব্যতিক্রম।
শিক্ষা ও রাজনৈতিক পথচলা
তাকাইচি কোবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন কংগ্রেসে কংগ্রেশনাল ফেলো হিসেবে কাজ করেন। এই অভিজ্ঞতাই তাঁর বাস্তববাদী রাজনীতির ভিত্তি গড়ে দেয়।
১৯৯৩ সালে প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাপানের পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন, এবং তিন বছর পর লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)-তে যোগ দেন।
হেভি মেটালের ছন্দে প্রধানমন্ত্রী
রাজনীতির বাইরে তাকাইচির পরিচয় আরও ব্যতিক্রমী — তিনি একজন হেভি মেটাল ড্রামার!
কলেজ জীবনে তিনি একটি ব্যান্ডে ড্রাম বাজাতেন। তাঁর প্রিয় ব্যান্ডের তালিকায় রয়েছে Iron Maiden ও Deep Purple।
জাপানি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, তিনি এত জোরে ড্রাম বাজাতেন যে, সবসময় চার জোড়া ড্রামস্টিক সঙ্গে রাখতেন, ভেঙে গেলে যেন হাতের কাছে মজুত থাকে!
‘আয়রন লেডি’ থেকে অনুপ্রেরণা, তবে জাপানি ছোঁয়ায়
তাকাইচি বরাবরই রক্ষণশীল, চিন-বিরোধী ও জাতীয়তাবাদী মনোভাবের পক্ষে সরব। অনেকের কাছে তিনি ‘জাপানের থ্যাচার’, কিন্তু তাঁর শৈলী আরও আধুনিক—হেভি মেটাল সুরে গড়া এক ‘আয়রন লেডি’।
জাপানের রাজনীতিতে তাঁর উত্থান শুধু নারী নেতৃত্বের ইতিহাসই নয়, বরং এশিয়ার রক্ষণশীল রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ও।