কিন্তু গত বেশ কিছু দিন ধরেই এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপক শেষ পর্যন্ত কে হবেন, সেই নাম নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছিল৷ সৌজন্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কারণ গত কয়েক মাসে প্রকাশ্যে অন্তত দশ বার তিনি দাবি করেছেন, এ বছর তাঁরই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত৷ কারণ তিনি অন্তত সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন বলে দাবি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের৷ ইজরায়েল এবং হামাস সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হলে সেই সংখ্যা ৮-এ পৌঁছত বলে দাবি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷
advertisement
কেন নোবেল পেতে মরিয়া ছিলেন ট্রাম্প?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর চারজন পূর্বসূরি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন৷ ২০০৯ সালে এই সম্মান পান বারাক ওবামা, ২০০২ সালে জিমি কার্টার, ১৯১৯ সালে উড্রো উইলসন এবং ১৯০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন থিওডোর রুসভেল্ট৷ চার জনের কার্টার বাদে প্রত্যেকেই প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন৷ বারাক ওবামা তো প্রেসিডেন্ট হওয়ার ৯ মাসের মধ্যেই নোবেল শান্তি পুরস্কার পান৷ নোবেল শান্তি কমিটির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি৷
কোন কোন যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন ট্রাম্প?
ইজরায়েল এবং ইরান
রাওয়ান্ডা এবং গণপ্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো
আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান
থাইল্যান্ড এবং ক্যাম্বোডিয়া
ভারত এবং পাকিস্তান
মিশর এবং ইথিওপিয়া
সার্বিয়া এবং কসোভো
রাওয়ান্ডা এবং গ্যাবন
তবে ট্রাম্প নিজে যুদ্ধ থামানোর দাবি করলেও বাস্তবে বহু ক্ষেত্রেই তাঁর দাবি ঘিরে সংশয় তৈরি হয়েছে৷ যেমন তাঁর উদ্যোগেই ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে যে দাবি ট্রাম্প করেছিলেন, নয়াদিল্লিই তা অস্বীকার করেছে৷
ট্রাম্পের নোবেল পাওয়ার দাবিকে সমর্থন করে কোন কোন দেশ?
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির৷
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত৷
মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য বাডি কার্টার৷
সুইডেন এবং নরওয়ের সাংসদরাও ট্রাম্পকে সমর্থন করেন৷
কেন পিছিয়ে পড়লেন ট্রাম্প?
এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নাম মনোনয়ন করার শেষ দিন ছিল ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫৷ ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং পাকিস্তান সরকারের মতো যারা এর পর নিজেদের পছন্দের নাম প্রস্তাব করেছে, সেগুলি গ্রাহ্যই হয়নি৷ নোবেল কমিটি জানিয়েছে, এ বছরের শান্তি পুরস্কারের জন্য মোট ৩৩৮টি নামের প্রস্তাব পেয়েছিল তারা৷ তার মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি সংগঠন ছিল৷
ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কারা ছিলেন?
গৃহযুদ্ধ অথবা খরার সময় সুদানের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তৈরি হওয়া এমার্জেন্সি রেসপন্স রুম৷ রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি, যিনি গণচন্ত্রের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন৷ রাষ্ট্রসংঘরে প্রধান অ্যান্তেনিও গুতেরেসের মতো অনেকেই৷
তবে এই প্রথম নয়, অতীতেও নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম আমেরিকা থেকেই অনেকে সুপারিশ করেছিলেন৷ আন্তর্জাতিক মহল থেকেও ট্রাম্পের নামের প্রস্তাব জমা পড়েছিল নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য৷
২০১৯ সালে প্রথম বার মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসেও ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দাবি করেছিলেন৷
শেষ পর্যন্ত কেন নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন না ট্রাম্প?
গাজা শান্তি চুক্তি ঘোষণায় দেরি- নরওয়ের একটি প্রথম সারির সংবাদপত্রের দাবি অনুযায়ী, নোবেল শান্তি কমিটি গত সোমবারই পুরস্কার প্রাপকের নাম চূড়ান্ত করে ফেলেছিল৷ কিন্তু গাজা চুক্তি ঘোষণা করা হয় তার পরে৷ তবে গাজা চুক্তি ঘোষণা হয়ে গেলেও যে ট্রাম্পই শান্তি পুরস্কার পেতেন, সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ৷
দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ ট্রাম্প- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে প্রচেষ্টা বা উদ্যোগগুলির ফল দীর্ঘমেয়াদী হয়, সেই ধরনের কাজকেই পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয় নোবেল শান্তি কমিটি৷ ট্রাম্প এই ধরনের শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ বলেই মত বিশেষজ্ঞদের৷
পুতিনের প্রশংসা- সম্প্রতি ট্রাম্পের মুখে পুতিনের প্রশংসা শোনা গিয়েছে৷ যা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গিয়েছে৷ কারণ একনায়কদের প্রশংসা নোবেল কমিটি ভাল ভাবে নেয় না৷ কারণ এই মনোভাব স্যর অ্যালফ্রেড নোবেল উইল-এর বিরোধী৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী কোনও প্রভাব বা শান্তি প্রতিষ্ঠায় সফল হন, সেক্ষেত্রে আবারও নোবেল শান্তি পুরস্কারের দৌড়ে তাঁর নাম আসতে পারে৷