মাথার উপর ঠাঁই নেই ৷ পেটে নেই খাবারও ৷ কী করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না ৷ অবশেষে একটা ছোট্ট পার্লারে কাজ জুটে যায় ৷ সেই শুরু ৷ সাংবাদিকতায স্নাতক হওয়া ৷ এর পর ধীরে ধীরে ফ্যাশনের দুনিয়ায় পা রাখা ৷ পাকিস্তান ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল ফ্যাশন শো-এ অংশ নেওয়া প্রথম রূপান্তরকামী মডেল হওয়া। তবে সেই দগদগে অতীতটা মনের কোণায় গভীর ক্ষতের মতো থেকেই গিয়েছে ৷ কষ্টের কথাগুলো অজানাই থেকে গিয়েছে সবার ৷ ঘরের একটা কোণে বসে কান্নায় দু’গাল ভেজানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না ৷ আজও দু’চোখ ফেঁটে নেমে আসছে জল ৷ তবে, এ কান্না দুঃখের নয় এক ফোঁটাও ৷ এ কান্না আনন্দের ৷ গর্বেরও ৷ যে মানুষগুলো এতদিন ধরে তাঁকে নিয়ে মজা করেছে, আজ তাঁদের উচিত জবাব দেওয়ার দিন ৷
advertisement
আজকের দিনটা এক্কেবারে অন্যরকম ২১ বছরের মার্ভিকা মালিকের কাছে ৷ তিনিই তো পাকিস্তানের প্রথম রূপান্তরকামী মহিলা সংবাদ পাঠিকা ৷ ইতিহাস তৈরি করেছেন তিনি ৷ গত শনিবার পাকিস্তানের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ‘কোহিনূর টিভি’তে সংবাদ পাঠ করেন মার্ভিকা ৷ আর তারপর থেকেই শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে যাচ্ছেন তিনি ৷ যে মানুষগুলো এতদিন তাঁর দিকে আড় চোখে তাকাতেন, আজ তাঁরাই মার্ভিকাকে নিয়ে আপ্লুত ৷ তবে কি এ বার পাকিস্তানের মানুষগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে ? হয়তো তাই, বা হয়তো না ৷ তবে এই ভালো একটা খবরের জ্বরে এই মুহূর্তে ভুগছে সোশ্যাল মিডিয়া ৷
২০০৯ সালে পাক শীর্ষ আদালত রূপান্তরকামীদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসাবে পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা বলে। ২০১৭ সালে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ ক্যাটেগরিতে পাকিস্তানে প্রথম পাসপোর্ট ইস্যু হয় । ২০০৯ সালে পাকিস্তানের শীর্ষ আদালত গত বছর থেকে আদমসুমারিতেও জায়গা করে নিয়েছেন রূপান্তরকামীরা। এবং চলতি মাসের প্রথমেই রূপান্তরকামীদের সুরক্ষায় বিল এনেছে সেনেট। এই বিল পাশ হলে আর কোনও রূপান্তরকামীকেই নিজেদের লিঙ্গ যাচাই করার জন্য ডাক্তারি পরীক্ষা দিতে হবে না। কোনওরকম হেনস্থারও সম্মুখীন হতে হবে না।
‘কোহিনূর টিভি’র ডিরেক্টর জুনেইদ আশরাফ জানিয়েছেন, তাঁরা সবার চাইতে আলাদা কিছু করতে চেয়েছিলেন ৷ আর সেই লক্ষ্যেই মার্ভিকাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে ৷ তবে মার্ভিকাকে সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় ছিল প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ৷ তাঁকে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে তাঁর লিঙ্গকে মাথায় রাখা হয়নি বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন আশরাফ ৷
সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার পর মার্ভিকার অনুভূতিটা ঠিক কেমন? থমসন রয়টার্স ফাইন্ডেশনকে মার্ভিকা জানিয়েছেন, আর পাঁচটা বৃহন্নলা, যাঁদের ট্রেনে-বাসে ভিক্ষে করতে দেখা যায় ৷ তাঁদের থেকে তাঁর গল্পটা এক্কেবারে আলাদা নয় ৷ ভিন্ন নয় সেই সমস্ত রূপান্তরকামীদের জীবন কাহিনি থেকেও ৷ যাঁদের জোর করে যৌন ব্যবসায় নামনো হয় ৷ কিংবা যাঁরা গালে মেকআপ ঘষে খদ্দেরের আশায় দাঁড়িয়ে থাকেন কোনও রাস্তার মোড়ে ৷ তিনি তাঁদেরই প্রতিনিধি ৷
আরও পড়ুন: একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী ! লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে মমতার ফর্মুলা
তবে রূপান্তকামীদের অবস্থাটা যে কতোটা সঙ্গীন, সেই দিকেও আলোকপাত করেছেন মার্ভিকা ৷ তিনি জানিয়েছেন, যে সময় রূপান্তরকামীদের বাবা-মায়েরা তাঁদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেন, সে সময় ভিক্ষে, বাচ্চা নাচানো কিংবা যৌন ব্যবসা করে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না ৷ আর এই কঠিন বাস্তব থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হল মানু৷ষের দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন হওয়া ৷ আর সেই দিকেই তাকিয়ে মার্ভিকা ৷