রবিবার সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে নেপালের কাঠমাণ্ডু থেকে ৬৮ জন যাত্রী নিয়ে পোখারার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ATR 72-500 বিমান। বিমানে ৪ জন বিমানকর্মীও ছিলেন। সব ঠিকই চলছিল। আবহাওয়াও ঝলমলে ছিল। সাধারণত, কাঠমাণ্ডু থেকে পোখরা আসতে সময় লাগে ২৩ মিনিট মতো। কিন্তু পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের ১০ সেকেন্ড আগেই ৩২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে হঠাৎই শ্বেতী নদীর কাছে ভেঙে পড়ে বিমানটি।
advertisement
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মাঝ আকাশেই আগুন ধরে গিয়েছিল বিমানে। মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা বিমানে আগুন লেগে যায়। অরুণ তামু নামে এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, "হঠাৎ এত জোড়ে আওয়াজ হল যেন বিশাল কোনও বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। আমরা কজন কাছেই ছিলাম, ওই ৫০০ মিটার মতো দূরে। ছুটে গিয়ে দেখি গোটা প্লেনেই আগুন ধরে গেছে। তখনও পর্যন্ত ২ জন মহিলা বেঁচে ছিলেন। কিন্তু, এত আগুন যে, ওঁদের কাছে পৌঁছনোর উপায় ছিল না।"
দীপক সাহি নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। কয়েকজন আহতকেও দেখেছিলেন। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও তাঁদের বাঁচানো যায়নি।
এদিনের দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ৫ ভারতীয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মারা গিয়েছেন ৪ রুশ, ২ কোরীয় নাগরিকও। এছাড়া, ১ জন আর্জেন্টিনার, এক জন আয়ইরিশ, এবং এক ফরাসি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছেন বিমানে থাকা ৫৩ জন নেপালি যাত্রী। নেপালের দুর্ঘটনা নিয়ে শোকপ্রকাশ করে ট্যুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নেপালের পরিবহণ মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে কোনও যান্ত্রিক গোলযোগের কারণেই এই বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নেপাল সরকার। এদিন ঘটনার পরেই মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডাকেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড। পরে ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেন। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিমানের ব্ল্যাকবক্স পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ জানা সম্ভব হবে না।
গত কয়েক বছরে একের পর এক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে নেপালে। গত ৬ মাসে পোখরায় এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কোনও প্লেন ক্র্যাশ করল। কেন এত ঘন ঘন দুর্ঘটনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ভৌগোলিক ও আবহাওয়া জনিত কারণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাদ দেওয়া যাচ্ছে না নজরদারির অভাব, পুরনো বিমানের ব্যবহার, ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এয়ারলাইন্সের মতো প্রসঙ্গও। নেপালের মতো পাহাড়ি এলাকায় বিমান চালানোর জন্য বিমানচালকেরা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পান কি না, বা এয়ারলাইন্সগুলি উপযুক্ত বিমানচালক নিয়োগ করেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এর উপরে রয়েছে চিন। সাম্প্রতিক অতীতে নেপালের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে সে দেশের নানা কাজে নানা ভাবে নাক গলাতে শুরু করেছে চিন সরকার। চিনা অর্থে তৈরি হচ্ছে সড়ক, বিমানবন্দর।
পোখরার নবনির্মিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও চিনের ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের টাকাতেই তৈরি। তৈরি করেছে চিনা ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা CAMC Engineering Co. Ltd। যা, চিনের সীমান্তবর্তী এলাকায় সড়ক এবং বন্দর তৈরির প্রকল্প China’s Belt and Road Initiative (BRI)-এর অংশ। তার উপরে কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই গত ১ জানুয়ারি তড়িঘড়ি সেই বিমানবন্দর উদ্বোধন করা হয়েছিল। দুর্ঘটনার পরে সেই বিমানবন্দরও সকলের প্রশ্নের মুখে।