আসলে চন্দ্রাকৃতির এক বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরি হতে চলেছে পৃথিবীর বুকে। এমনই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে, কানাডা (Canada)-র এক স্থাপত্য নির্মাণ সংস্থা। এই সংস্থা চারটি স্থানে এই ‘ডেস্টিনেশন রিসোর্ট’ (Destination Resort) তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে সব থেকে পাল্লা ভারী দুবাই (Dubai)-এর।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (UAE) এমন এক দেশ যেখানে প্রায় সমস্ত স্থাপত্যই বিশ্বের বিস্ময় উদ্রেক করে। ফলে এমনটা একটা দেশে গোলাকার চাঁদ এসে নেমেছে, এমন কল্পনা করাটাও কিছু খাপছাড়া হবে না।
advertisement
আরও পড়ুন: 'কোথায় শুভেন্দু অধিকারী', শাসক দলের নিশানায় বিরোধী দলনেতার 'ফ্লপ শো'
সম্প্রতি একটি ছবি ইন্টারনেটে পাওয়া গিয়েছে। যেখানে দুবাই শহরের কাছে সুবিশাল এক চাঁদের মতো স্থাপত্য Moon World Resorts Inc. (MWR)-কে দেখা যাচ্ছে। পশ্চাদপটে চিহ্নিত করা যাচ্ছে বুর্জ খলিফা (Burj Khalifa)-কেও। প্রবল চন্দ্রদ্যুতি যেন খানিকটা হলেও ম্লান করে দিয়েছে বুর্জ খলিফার চাকচিক্য।
আরও পড়ুন: 'আস্ত একটা আলুভাতে, বিজেপি কর্মীরা শুনুন, শুভেন্দুর দমই নেই', প্রবল কটাক্ষ কুণালের
এই পরিকল্পনার পিছনে থাকা দুই উদ্যোক্তার একজন হলেন মিশেল হেন্ডারসন (Mecheal Henderson)। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, এই প্রকল্পটি বেশ বড়, অত্যন্ত জটিল এবং সম্পূর্ণ অনন্য। গোলকটি ১৯৮ মিটার ব্যাস-সহ ২০০ মিটারেরও বেশি উঁচু হতে চলেছে। এই প্রকল্পে চার হাজার বিলাস বহুল রিসর্ট স্যুট (Luxury Resort Suits) থাকবে। তবে এরই সঙ্গে থাকতে চলেছে ৩০০টি বুটিক আবাস। যেগুলি কিনে নিতে পারবেন যে কেউ। প্রধান সুপারস্ট্রাকচার ডিস্কের মধ্যেই এই আবাসনগুলি থাকবে। এ সব আবাসনের মালিকেরা একটি ক্লাবের সদস্যপদ পাবেন। তাঁদের নানা রকম সুবিধা দেওয়া হবে।
পৃথিবীর বুকে চাঁদ—
অবিকল চাঁদের মতো চেহারা দেওয়ার জন্য এই স্থাপত্যের সম্মুখভাগে চন্দ্রকলঙ্কও তৈরি করা হবে। অর্থাৎ চাঁদের পিঠের মতো গর্তও থাকবে। কী ভাবে তৈরি করা হবে এই ধরনের চেহারা? হেন্ডারসন বলেন, ‘একটি কার্বন ফাইবার যৌগ ব্যবহার করা হবে যা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং টেকসই। এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সৌর কোষের (Solar Cell) সঙ্গেও যুক্ত করা হবে।’
চন্দ্রপৃষ্ঠের মতোই আলোকিত হবে এই ভবন, এমনই জানানো হয়েছে স্থাপত্য সংস্থার পক্ষ থেকে। এমনকী চাঁদের বিভিন্ন পর্যায়গুলি চিত্রিত করতে ব্যবহার করা হতে পারে আলো। হেন্ডারসন বলেন, ‘আমাদের কাছে বুর্জ খলিফা লাইট শো-এর মতো একাধিক ডিসপ্লে অপশন রয়েছে। কখনও কখনও পুরো ভবনটি UAE-এর পতাকা হয়ে উঠতে পারে।’
সারা বিশ্বে চারটি ‘মুন ডেস্টিনেশন রিসর্ট’
MWR সারা বিশ্বে চারটি ‘মুন ডেস্টিনেশন রিসর্ট’ তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। এগুলি তৈরি হতে পারে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং MENA (Middle East and North Africa)-য়। লাস ভেগাসে (Las Vegas)-এ এমন একটি রিসোর্ট তৈরি হবে বলে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
MENA অঞ্চলের জন্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), বাহরাইন (Bahrain), কাতার (Qatar) এবং সৌদি আরব (Saudi Arabia)-এর কথা ভাবা হচ্ছে।
সংস্থার তরফে নির্মাণ খরচ ৫ বিলিয়ন ডলার ধরা হয়েছে। যার বার্ষিক রাজস্ব অনুমান থাকতে পারে ১.৮ বিলিয়ন ডলার।
অনুমোদন পাওয়া গেলে ‘মুন দুবাই’-য়ে বছরে অন্তত ১ কোটি মানুষ আসবেন। হেন্ডারসন জোর দিয়ে বলেন, সম্পূর্ণ রিসোর্টটি একটি LEED গোল্ড ফাইভ-স্টার মানে নির্মিত। শুধু তাই নয় Five Diamond স্তরে পরিষেবা দেওয়া হবে।
ঠিক কতদিন লাগবে এই রিসোর্ট তৈরি হতে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে হেন্ডারসন দাবি করেছেন, সমস্ত কিছু ঠিক ঠাক থাকলে জমি পাওয়ার পর ১২ মাসের প্রাক-উন্নয়ন কর্মসূচি প্রয়োজন হবে। তারপর নির্মাণ কাজে সময় লাগতে পারে ৪৮ মাস। সেই হিসেবে ধরলে যদি ২০২২-এর শেষ নাগাদ কাজ শুরু হয়ে যায় তবে ২০২৭ সালের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে খুলে যেতে পারে চাঁদের দরজা।
মাধ্যাকর্ষণহীনতা—
শুধু বাইরে থেকেই নয়। ভিতরেও দর্শকরা অনুভব করতে পারবেন চাঁদের মতো অভিজ্ঞতা। হেন্ডারসন জানিয়েছেন, মূল আকর্ষণই হতে চলেছে চন্দ্রপৃষ্ঠে হাঁটা। অতিথিরা এই বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন। তবে কি চাঁদের মতোই ওজন কমে যাবে এই রিসর্টের ভিতরে ঢুকলে?
সংস্থার তরফে জানা হয়েছে চাঁদের মতো অভিজ্ঞতা তৈরি করতে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি হেন্ডারসন।