সময়টা ২০০৯ সাল। এমন কিছু বেশি আগের ঘটনাও নয়। সে সময় পাকিস্তানে চলছে সন্ত্রাসবাদী তালিবানি আগ্রাসন। সেই লক্ষ্যেই পাকিস্তানের মেয়েদের কাছে এক ব্লগ লেখার প্রতিযোগিতার আহ্বান জানিয়েছিল বিবিসি সংবাদমাধ্যম। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি। স্বাভাবিক, কেই বা সাহস করে এগিয়ে যাবেন নৃশংস তালিবান আদর্শের বিরুদ্ধে। এর তো শাস্তি একটাই- মৃত্যু!
কিন্তু পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মালালা ইউসুফজাইয়ের চিন্তার কারণ ছিল অন্য। তালিবানি শাসনে রোষের মুখে পড়েছে মেয়েদের পড়াশোনা- এ বার তা হলে তিনি পরীক্ষা দেবেন কী করে?
advertisement
এক দিকে যখন পরিস্থিতির জেরে বিবিসি আর মালালা দুই পক্ষই নিরাশ, সেই সময়ে সংস্থার এক কর্মী জিয়াউদ্দিন খুঁজে বের করে দেন সমাধান। জানান, এই ব্লগ লিখবেন তাঁর ছোট্ট মেয়ে মালালা। কেন না সেই মেয়ে নিয়মিত ডায়েরি লেখে। অতএব পরিস্থিতি বিশদে ফুটিয়ে তুলতে তাঁকে বেগ পেতে হবে না।
সেই শুরু মালালার বিখ্যাত হয়ে ওঠা। বিবিসি-র ব্লগ প্রকাশের পরেই তাঁকে নিয়ে সাড়া পড়ে যায় বিশ্বে। ২০১০ সালে তাঁকে নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ এক তথ্যচিত্রও তৈরি হয়। আর যত বিশ্ব তাঁকে চিনতে শুরু করে, তালিবানদের রোষ বাড়তে থাকে। পরিণামে ২০১২ সালে স্কুল থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসবাদীদের গুলির নিশানা হয়ে ওঠেন এই মেয়ে!
হয় তো তাঁর মৃত্যুই হত! কিন্তু তত দিনে মালালা হয়ে উঠেছেন বিশ্বের মুখ। সেই মুখ যা নারীশিক্ষার বিস্তার চায়! আর এই জায়গা থেকেই মালালার লড়াই হয়ে উঠল সারা বিশ্বের লড়াই। লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হল তাঁকে, চলতে থাকল চিকিৎসা। সুস্থ হয়ে উঠে সেখানেই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকলেন মালালা।
আর এরই ফাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনকর্মী ডেসমন্ড টুটু নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নে তাঁর নাম যুক্ত করেন। পরিণামে ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর, শিশুদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে ও শিক্ষার অধিকারের লড়াইয়ের জন্য মালালা ইউসুফজাই ও ভারতীয় সমাজকর্মী কৈলাস সত্যার্থীকে একসঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।
ঠিক যেন এক উপন্যাসের গল্প, তাই না? সাম্প্রতিক নোবেল পুরস্কারের প্রেক্ষাপটেও যা ভোলা যায় না!