দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়নার বিস্তৃতি প্রায় ২২০০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে। এখনও পর্যন্ত এটি অক্ষুণ্ণ রয়েছে। কিন্তু এই প্রাচীর সংরক্ষণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সায়েন্স অ্যাডভান্স-এ একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। আর সেখানে গবেষকরা একটা রহস্য ফাঁস করেছে। তবে সেটা একটা বিতর্কের অবসানও ঘটিয়েছে। আসলে ওই প্রাচীরের সংরক্ষণের জন্য যে জীবন্ত উপাদান উপস্থিত রয়েছে, তার উপযোগিতা এবং ঝুঁকি নিয়ে একটা বিতর্ক চলছিল। গবেষকদের এই গবেষণায় এই বিতর্কের সমাপ্তি ঘটেছে।
advertisement
জীবিত পদার্থের আস্তরণ:
চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং স্পেনের এক দল গবেষক একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন। মূলত দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়নার সংরক্ষণ কিংবা ক্ষতির জন্য বায়োক্রাস্টের ভূমিকা কী, সেটা নিয়ে গবেষণা করাই ছিল লক্ষ্য। বায়োক্রাস্ট হল অর্গ্যানিক উপাদান, যা প্রাচীরের উপরে জমা হয়। আর সেটা জমতে জমতে কয়েক মিলিমিটার থেকে শুরু করে কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত গভীর হয়। এর মধ্যে থাকে ব্যাকটেরিয়া, অ্যালগি, ফাঙ্গি। সেই সঙ্গে ওই আস্তরণের পৃষ্ঠতলে থাকে ছোট্ট ছোট্ট গাছও।
জীবন্ত এই উপাদান কি ক্ষতিকর?
কিছু মানুষ মনে করে যে, ভৌত এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলি একত্রিত হয়ে ভূপৃষ্ঠের নিচের কাঠামোকে একভাবে অপক্ষয় দ্বারা পীড়িত করে দেয়। যার ফলে চিনের সুবিশাল প্রাচীরের মতো কাঠামোকে সংরক্ষণ করার জন্য সেগুলিকে অপসারণ করা উচিত। আবার অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন যে, জীবিত পদার্থের এই আস্তরণ এক ভাবে প্রাচীরের সংরক্ষণে সাহায্য করে চলেছে।
৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশ জুড়ে গবেষণা:
এই বিষয়টা যাঁরা মানেন, তাঁদের বক্তব্য, প্রাচীরের পৃষ্ঠতলের মাটিকে হাওয়া এবং বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বড় ভূমিকা পালন করে বায়োক্রাস্ট। অর্থাৎ এটা অনেকটা রক্ষাকবচের মতো ভূমিকা পালন করে। কারণ এটা ভূপৃষ্ঠ বা প্রাকৃতিক পৃষ্ঠতলকেও রক্ষা করে। আর এর সত্যতা জানার জন্যই গবেষকদের একটি দল এই বিষয়টি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর জন্য গবেষকরা দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়নার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশকে বেছে নিয়েছিলেন। সেখানে অবশ্য শুষ্ক আবহাওয়াকে একটু বেশিই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের ব্যবহার:
বেশিরভাগ অংশেই এই কাঠামো একাধিক প্রাচীর দ্বারা গঠিত। চিনের উত্তর সীমান্তে দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়না নির্মাণ শুরু হয়েছিল। এর বেশিরভাগ অংশই আঁকাবাঁকা। এটা দেখতে অনেকটা পাহাড়ের উঁচু-নিচু পাথরের মতো। আবার এই প্রাচীরের পুরনো অংশ মাটি দিয়ে ঠাসা। আসলে কাঠের কাঠামোর মধ্যে মাটি ভরা হয়েছিল যতক্ষণ না এটা পাথরের মতো কঠিন হয়ে গিয়েছে।
বেশিরভাগ অংশই ক্ষতিগ্রস্ত:
গোবি মরুভূমির মতো অতিরিক্ত শুষ্ক এলাকায় বালি, নুড়িপাথর এবং ঝোপঝাড়ের ছোটখাটো ডাল এই প্রাচীর তৈরির মশলায় ব্যবহার করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাচীরের বেশিরভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এমনিতে কিন্তু যেটা বেশিরভাগ প্রাচীরের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ অংশের ভিত্তি বৃষ্টি এবং হাওয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। যার ফলে অবস্থার অবনতি হয়েছে।
আরও পড়ুন, তার ডেরাতেই লুকিয়েছিল মূল অভিযুক্ত ললিত, সংসদ হামলা কাণ্ডে ধৃত ষষ্ঠ অভিযুক্ত মহেশ
এর উপকারিতা কী?
গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, ওই প্রাচীরের অবশিষ্ট অংশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বায়োক্রাস্টের আস্তরণ দ্বারা আবৃত। যেখানে সায়ানোব্যাকটেরিয়া এবং মস প্রজাতি একসঙ্গে যেন বসতি গড়ে তুলেছে। এমনও দেখা গিয়েছে, যেখানে শ্যাওলা এবং গাছ রয়েছে, সেই সব জায়গার প্রাচীরের পৃষ্ঠতলের নিচের অংশে তেমন ছিদ্র দেখা যায়নি। যার ফলে প্রাচীরের সেই সব অংশকে সহজে টলানো যায় না। কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
সাধারণ ভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, শ্যাওলা এবং ছোট ছোট উদ্ভিদ প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত করে দিতে পারে।
গবেষকরা রিপোর্টে প্রকাশ করেছেন যে, দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়নার ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে আবহাওয়ার জন্য হওয়া অপক্ষয়ের তুলনায় এটা কম ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এমনকী এই আস্তরণ অনেকটা রক্ষাকবচের মতো কাজ করে। এটা সত্যি যে, চিনের মহাপ্রাচীরে এই শ্যাওলার আস্তরণ পর্যটকদের চোখে হয়তো ভাল নয়। কিন্তু প্রাচীর সংরক্ষণে এর ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।