তিন যুগ পেরিয়ে দক্ষিণী এখন সুবৃহৎ পরিবার; আদর্শে, আচরণে একেবারে মনের মানুষ, কাছের বন্ধু। মোহাভি ডেসার্ট-এর ধারে কাশ ফুল আর প্রশান্ত মহাসাগরের ওপরে পেঁজা তুলোর মেঘ মানেই দক্ষিণীর জয়ঢাকে কাঠি পড়লই। সপ্তাহান্তের পুজো পালন এবার অক্টোবর ৭-৯।কুশীলবরা কিন্তু ব্যস্ত বছরভর।
advertisement
টর্যান্স হাই স্কুলের ইতিহাসমন্ডিত অনিন্দ্যসুন্দর চত্বরে তিনটে দিন কেটে যায় ঠিক পাড়ার পুজোর আবেশেই। কুমোরটুলি থেকে ২০১৩-২০১৪ তে আনা প্রতিমা একেবারে ঘরের মেয়ে দশভূজা। প্রাঙ্গনে প্রবেশের আগেই দূর থেকে শোনা যায় লাঊডস্পিকারে নতুন-পুরোনো গান। ভেতরে একাধিক জটলায় শাড়ি-পাঞ্জাবিতে বাঙালিয়ানা। নতুন পোশাক আশাকের গন্ধমাখা আড্ডা, মায়ের সামনে আরতি থেকে পুষ্পাঞ্জলি দুবেলা ভুরিভোজ, তিন দিন ধরে অতিথি শিল্পীর মেলা।
প্রতিবছর থাকে স্থানীয় থেকে কলকাতার শিল্পীদের নানা অনুষ্ঠান। ২০২২-এ মঞ্চ আলো করতে আসছেন সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ, বেনী দয়াল, এবং জয়তী চক্রবর্তী। শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই নাকি হাউজ ফুল! ২০২০-র কোয়ারান্টাইনের সময়ে পুজো বন্ধ হয়নি, তবে পালন হয়েছিল ছোট পরিসরে। ২০২১-এ মাস্ক পরে ধুনুচি নাচ, সিঁদুর খেলা, সেতার-গান-কবিতা-নাটক হৈহৈ করেই হল। কোভিড পরবর্তী স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অনেকটাই ফেরত এসেছে, তাই এবার পুজো পালনের উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী।
বসুধৈব কুটুম্বকম-এর যে আদর্শে দক্ষিণীর গোড়াপত্তন, দেশি-বিদেশি-জাতি-ধর্ম-বয়েস-ভাষা নির্বিশেষে ‘সবারে করি আহ্বান’-এর তার আজকের ইউ-এস-পি ও সেই আত্মীকরণ। কচিকাচাদের নিয়ে তিন মাসের মহড়ায় যে নাটকের উপস্থাপনা হয় প্রতিবার, সেটা পুরোটাই সদস্যদের লেখা-সুর-কস্টিউম-গান-বাজনা-আলোকসম্পাত শিল্পীসত্ত্বার চমক। আরেক দিকে সারা বছর নীরবে কাজ করে শিল্পীবৃন্দ ফিবছর উপহার দেন নতুন নতুন নজরকাড়া মণ্ডপ।
চা, বিস্কুট, ঝালমুড়ি থেকে খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুনী হয়ে মাছের ঝোল, পাঁঠার মাংস, আর মিষ্টিমুখ, কিছুই বাদ যায় না। আনন্দমুখর সময়ে বিগতপ্রাণ সদস্যদের কথা মনে পড়ে, তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়, মন ভারাক্রান্ত হয়। আবার পরবর্তী প্রজন্মকে পুজোয় সামিল হতে দেখে মনে হয়, দক্ষিণীর যৌথ পরিবারের দাক্ষিণ্যে এক টুকরো বাংলার ছত্রছায়া পরবাসকে নিজবাসই করে রেখেছে। দক্ষিণীর তরফে সাদর আমন্ত্রণ রইল সবাইকে। 'দিও তোমার পায়ের চিহ্ন এই বাটে।'
প্রতিবেদন: প্রিয়দর্শী মজুমদার, ক্যালিফোর্নিয়া