সম্প্রতি মার্কিন সংসদ বা হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ এই বিল পাশও হয়ে গিয়েছে৷ নতুন এই আইনেই এমন সংস্থান রাখা হয়েছে, যাতে আমেরিকা থেকে অন্য কোনও দেশে টাকা পাঠালে (রেমিট্যান্স) ৩.৫ শতাংশ করে কর চাপবে৷ প্রাথমিক ভাবে যা ৫ শতাংশ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু চাপের মুখে সেই করের হার কমিয়ে ৩.৫ শতাংশ করা হয়েছে৷ আমেরিকায় কর্মরত বিদেশি কর্মী এবং শ্রমিকদেরই মূলত এই নতুন আইনের কোপে পড়বেন৷ আমেরিকায় বসবাসকারী বা কর্মরত যাঁদের গ্রিন কার্ড রয়েছে অথবা যাঁরা এইচ ১ বি ভিসা নিয়ে আমেরিকায় অস্থায়ী ভাবে থেকে কাজ করছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই এই নতুন আইনের আওতায় আসবেন৷
advertisement
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এই নতুন আইনেরই সমালোচনায় সরব হয়েছেন টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক৷ যে বিতর্কের জেরে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কেও ফাটল ধরেছে৷ প্রস্তাবিত এই নতুন বিল আমেরিকাকে দেউলিয়া করে ছাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মাস্ক৷
কেন ধাক্কা খাবে ভারতীয় অর্থনীতি?
এনডিটিভি-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাঙ্ক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে রেমিট্যান্স বাবদ ভারতে ১২৯ বিলিয়ন ডলার এসেছে৷ যা সম্মিলিত ভাবে পাকিস্তান (৬৭ বিলিয়ন ডলার) এবং বাংলাদেশের (৬৮ বিলিয়ন ডলার) বার্ষিক বাজেটের থেকেও বেশি৷ এর মধ্যে সবথেকে বেশি পরিমাণ অর্থ দেশে আসে আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয়দের থেকেই৷
আরও পড়ুন: এপ্রিলে ভোট কেন, ফুঁসে উঠল বিএনপি! বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে মহাচাপে ইউনূস, উঠল বিরাট অভিযোগ
আমেরিকায় যে কয়েক লক্ষ ভারতীয় কর্মরত রয়েছেন বা বসবাস করছেন, ভারতে নিজেদের পরিবারকে নিয়মিত টাকা পাঠান তাঁরা৷ যাকে বলা হয় রেমিট্যান্স৷ কোটি কোটি টাকার সেই আর্থিক লেনদেনের উপরেই এবার করের বোঝা চাপাতে চাইছেন ট্রাম্প৷ ফলে সংসার চালানোর জন্য দেশে টাকা পাঠাতে গেলে মোটা টাকা কর দিতে হবে আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় সহ অন্যান্য দেশের কর্মী ও শ্রমিকদেরও৷
গত দশ বছরে ভাবে আমেরিকা সহ বিদেশে কর্মরত ভারতীয়দের থেকে দেশে আসা অর্থে বা রেমিট্যান্স-এর পরিমাণ প্রায় ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই অঙ্কটা ছিল প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার৷ ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য রয়েছে যেখানে বহু পরিবার এই রেমিট্যান্স বা বিদেশ থেকে আসা অর্থের উপরেই নির্ভরশীল৷ তার মধ্যে রয়েছে কেরল, মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ বিহারের মতো রাজ্যগুলি৷
বিদেশে কর্মরত ভারতীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি
১৯৯০ সালে বিদেশে কাজের খোঁজে যাওয়া ভারতীয়ের সংখ্যা ছিল ৬৬ লক্ষের মতো৷ ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি৷ উপসাগরীয় দেশগুলিতে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় কর্মী এবং শ্রমিক কাজের সন্ধানে যান৷ কিন্তু ধীরে ধীরে আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলিতেও ভারতীয় কর্মী এবং শ্রমিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে৷ তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যপরিষেবা, অর্থনৈতিক, ইঞ্জিনিয়ারিং- সবক্ষেত্রেই দাপট বাড়ছে ভারতীয়দের৷
সাম্প্রতিক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয়দের মধ্যে ৭৮ শতাংশই উচ্চ আয়ের সঙ্গে যুক্ত পেশাদার৷ যার ফলে আমেরিকা থেকে ভারতে আসা রেমিট্যান্স বা অর্থের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বিদেশে কর্মরত ভারতীয়দের মাধ্যমে যে টাকা দেশে আসে, ২০২৩-২৪ সালে তার মধ্যে সর্বাধিক ২৮ শতাংশই এসেছে আমেরিকা থেকে৷ গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরাই) সংবাসংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবিত কর চালু হলে ভারতে আসা বিদেশি মুদ্রার পরিমাণে বড়সড় ধাক্কা লাগবে৷ এর ফলে বার্ষিক কয়েক বিলিয়ন ডলার হারাতে পারে ভারতীয় অর্থনীতি৷