ঢাকা: আগুন আর ধোঁয়ার তীব্রতায় ঘুম ভেঙে যায় নাজমা বেগমের। রাত দুটো বাজে তখন। ঘরের ভেতর আগুন জ্বলছিল। সেই আগুনে পুড়ছিল নাজমার ৭ বছর বয়সী মেয়ে আয়শা আক্তার। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছোট্ট আয়শা চিৎকার করছিল, ‘আমাকে নাও, আমাকে নাও।’ চোখের সামনে সেই দৃশ্য দেখলেও কোনও ভাবেই আয়শার কাছে যেতে পারেননি মা। পুড়ে যাওয়ার ঘরের পাশে বসে বিলাপ করে কেবল সেই কথাই বলছিলেন তিনি।
advertisement
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, ‘আগুন লাগার পর বড় মেয়ে আর মেজো মেয়েকে টিনের ফাঁক দিয়ে ঘর থেকে বের করা হয়। ছোট মেয়েটা শুধু চিৎকার করছিল, আমাকে নাও, আমাকে নাও বলে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি। আমার চোখের সামনে মেয়েটা পুড়ে গেল। ক্ষণে ক্ষণে মাটি চাপড়ে চিৎকার করে উঠছিলেন নাজমা বেগম, ‘আয়েশা, মা রে। তুই কোথায় গেলি?’ একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যান তিনি।
শনিবার সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সুতারগোপ্তা এলাকায় দেখা যায় বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের (৫০) বাড়ির সামনে ভিড়। গত শুক্রবার গভীর রাতে তাঁর বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এই ঘটনার সময় তিনি, তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগম আর তিন মেয়ে ঘরে ছিলেন। দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে বেলাল বের হতে পারলেও ছোট মেয়েকে বের করতে পারেননি।
লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং সুতারগোপ্তা বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন এই ঘটনাকে নাশকতা বলে দাবি করেছেন। রাত দুইটার দিকে তাঁর বাড়ির দরজায় তালা দিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় পুড়ে মারা যায় তাঁর ৭ বছর বয়সী মেয়ে আয়শা। গুরুতর দগ্ধ হয় দুই মেয়ে বীথি আক্তার (১৭) ও স্মৃতি আক্তার (১৪)। তাদের দুজনকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। আগুনে বেলাল হোসেনের ঘরটিও পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন বেলাল নিজেও। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে আয়েশা শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
