স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ঝিনাইদহ জেলা শহরে আক্রান্ত হন গোবিন্দ বিশ্বাস নামে এক সংখ্যালঘু রিকশাচালক। অভিযোগ, তাঁর হাতে লাল রঙের সুতো দেখে সন্দেহ প্রকাশ করে স্থানীয় কয়েকজন। এরপরই গুজব ছড়ানো হয় যে তিনি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (RAW)-এর সঙ্গে যুক্ত। সেই গুজবকে কেন্দ্র করেই উত্তেজিত জনতা তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ।
advertisement
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ঝিনাইদহ জেলা পুরসভার গেটের কাছে গোবিন্দ বিশ্বাসকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মারধরের ফলে তাঁর গলা ও বুকে গুরুতর চোট লাগে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই ঘটনার একাধিক ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার সময় গোবিন্দ বিশ্বাস কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন। তিনি বলেন, তিনি একজন সাধারণ রিকশাচালক এবং তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানান। পরে তাঁকে ঝিনাইদহ সদর থানায় আটক রাখা হয়।
আরেকটি ভিডিওতে, যা থানার ভেতরে তোলা বলে দাবি করা হচ্ছে, সেখানে এক অজ্ঞাত কণ্ঠ দাবি করে যে গোবিন্দ বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ লেনদেনের তথ্য রয়েছে এবং তিনি ভারত থেকে একটি ফোন কল পেয়েছিলেন। যদিও গোবিন্দ বিশ্বাস পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই কলটি আকাশ নামে এক পরিচিত ব্যক্তির, যিনি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর পরিচিত।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি গোবিন্দ বিশ্বাসকে আটক রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে যে গোবিন্দ বিশ্বাস কয়েক বছর ভারতে বসবাস করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এই ঘটনা এমন এক সময় সামনে এল, যখন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস খুনের ঘটনার পর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, দীপু চন্দ্র দাস হত্যার সঙ্গে যুক্তদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য ঢাকার কাছে জোরালো দাবি জানানো হয়েছে।
২০ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে হওয়া বিক্ষোভ প্রসঙ্গে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভারতে থাকা বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগও খারিজ করে দেন।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে একটি ছোট দল অল্প সময়ের জন্য হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় এবং পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
