শাকসগাম- কারাকোরাম পাসের মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে চিনা আগ্রাসন ঠেকানোর লক্ষ্যেই এই ব্যবস্থা নিয়েছে ভারতীয় সেনা৷ দৌলত বেগ ওল্ডিতে কারাকোরাম পাসের দক্ষিণে ছিপ-ছাপ নদীর ধারে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় ভারতীয় সেনার শেষ পোস্ট রয়েছে৷
৪৬ টন ওজনের টি-৯০ ট্যাঙ্কের ভার যেহেতু কয়েকটি সেতুর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়, তাই যেখানে নদীর গভীরতা কম, সেখানে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে এই ট্যাঙ্কগুলিকে নদীর পার করিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ গত ১৫ জুন চিনা বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরই বাহিনীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সশস্ত্র যান (এপিসি), এম৭৭৭ ১৫০এমএম হোউইটজার এবং ১৩০এমএম বন্দুক ওই এলাকায় পাঠিয়েছিল ভারতীয় সেনা৷
advertisement
সামরিক এবং কূটনৈতিক স্তরের আলোচনায় দুই দেশই বাহিনীকে পিছিয়ে নেওয়া এবং উত্তেজনা কমানোর কথা বললেও বাস্তবে দু' পক্ষই পরস্পরের গতিবিধির উপরে নজর রেখে চলেছে৷ সেই নীতি অনুসরণ করেই চিনের সঙ্গে সমান তালে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করছে ভারতীয় সেনা৷
ভারতীয় সেনার কমান্ডারদের মতে, পিএলএ-র মূল উদ্দেশ্যই হল এবারের গ্রীষ্মের মধ্যেই পূর্ব লাদাখে প্রকৃত ১১৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যে জায়গাগুলি নিয়ে ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাত, সেগুলি নিজেদের দখলে নিয়ে চিনের দাবি মতো ১৯৬০ সালের মানচিত্রকে প্রতিষ্ঠা করা ৷ যদিও গত ১৫ জুন চিনা বাহিনীর সেই অপচেষ্টাকে রুখে দেয় ভারতীয় সেনার বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা ৷
শাকসগামে ইতিমধ্যেই ৩৬ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে চিন৷ ১৯৬৩ সালে এই শাকসগামের ৫১৬৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা বেআইনি ভাবে চিনের হাতে তুলে দিয়েছিল পাকিস্তান৷ ভারতের আশঙ্কা, এবার শাকসগাম পাস হয়ে কারাকোরামের সঙ্গে লাসা- কাসগর (জি-২১৯) হাইওয়েকে জোড়ার চেষ্টা করবে চিন৷ এর জন্য অবশ্য শাসকসগাম হিমবাহের নীচে চিনকে সুড়ঙ্গ তৈরি করতে হবে৷ কিন্তু চিনের সেই প্রযুক্তিগত দক্ষতা রয়েছে বলেই মনে করে ভারত৷ আর একবার যদি এই লক্ষ্যে চিন সফল হয়, তাহলে নতুন তৈরি এই রাস্তা দিয়েই দৌলত বেগ ওল্ডির উপরে উত্তর দিক থেকে সহজেই নজরদারি চালাতে পারবে চিন৷
চিনের আরও একটি উদ্দেশ্য হল নতুন এই পথ তৈরি করে লাসা- কাসগর হাইওয়ের সঙ্গে কাসগড়-ইসলামাবাদ কারাকোরাম হাইওয়েকে (জি-৩১৪) যুক্ত করা৷ এর ফলে এই পথে অনেকটাই সময় বাঁচবে৷ পাশাপাশি এই উদ্দেশ্য সফল হলে শুধুমাত্র দৌলত বেগ ওল্ডি নয়, সিয়াচেনের ভারতীয় পোস্টও শত্রুপক্ষের অনেকটাই নাগালের মধ্যে চলে আসবে ৷
কার্গিল যুদ্ধের সময় যেভাবে শ্রীনগর- কার্গিল হাইওয়েকে নিশানা করে কার্গিলে ভারতীয় সেনার রসদ জোগান বন্ধ করতে চেয়েছিলেন পারভেজ মুশারফ, এবার শি জিনপিং-এর চিনও দৌলত বেগ ওল্ডিকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে অনেকটা সেরকমই পরিকল্পনা করেছে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা ৷