রবিবার সকাল থেকেই ঐতিহাসিক মাহেশের রথের তলায় বসেছিল স্নান যাত্রার আসর। ৬২৭ বছরের প্রাচীন জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা উপলক্ষে এ দিন সকাল থেকেই জগন্নাথ মন্দির চত্বরে নেমেছিল ভক্তদের ঢল। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শুরু হয়ে যায় প্রভু জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা রানীর বিশেষ পুজো অর্চনা।
advertisement
অতি প্রবৃত্ত এই দিনটি যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে । এই দিন ভক্তরা এসে প্রভু জগন্নাথের কাছে তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য পুজো দিয়েছেন। প্রথা মত সকাল থেকে পুজোপাঠ শুরু হয়। সকাল নটার সময় জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা বিগ্রহ কে নিয়ে আসা হয় নিয়ে আসা হয়েছিল মন্দির সংলগ্ন প্রাচীন স্নান মন্দিরে । হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে জয় জগন্নাথ ধ্বনির মধ্য এখানকার সেবায়ইত এবং ব্রাহ্মণদের দ্বারা স্নানপর্ব সমাধা হয় ।
এই ব্যাপারে বলতে গিয়ে মাহেশ জগন্নাথ দেব ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক পিয়াল অধিকারী জানালেন মাহেশের রথযাত্রা উৎসবের মাহাত্ম্যর কথা। পুরী তেও এত সমারোহে স্নানযাত্রা উৎসব পালিত হয় না। এখানকার স্নানযাত্রার যে জল সেই জল আসে রিষড়ার কুমোর পরিবার থেকে। তারা গঙ্গায় যে ষাঁড়াষাঁড়ি বান হয সেই জল সারা বছর ধরে মাটির ঘড়া ভরে সংগ্রহ করে রাখেন। সুগন্ধি দিয়ে কলাপাতায় মুড়ে সেই আটাশ ঘড়া জল এবং দেড় মণ দুধ দিয়ে প্রভু জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রা রানীকে স্নান করানো হয়।
এবারও প্রথা মেনে তা হয়েছে। আগামীকাল থেকে জগন্নাথ দেবের মন্দির পনেরো দিনের জন্য বন্ধ থাকবে ।এই সময়টাকে বলা অনঅবসর সময় ।এই সময় মন্দিরের ঘন্টা উলুধ্বনি কিছুই ধ্বনিত হবেনা। ইশারাতেই প্রভুর পুজো হয়। শুধু তাই নয় রীতি অনুযায়ী স্নান এর পরে মহাপ্রভুর জ্বর আসে। ঘাটাল মেদিনীপুর এবং আরামবাগের বিভিন্ন জায়গা থেকে বৈদ্যরা এসে প্রভুর চিকিৎসা করেন, এবং পাচন সেবন করান। এর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় জগন্নাথ দেবের অঙ্গরাগ।
আরও পড়ুন: ”খবর দেখতেই পায়ের তলার মাটি সরে গেল, যে ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে তাতেই আমার স্বামী সওয়ার”
এখানকার মহাপ্রভুর দারুবিগ্রহ ৬২৭ বছরের প্রাচীন । পুরীতে যেমন বার বছর অন্তর বিগ্রহ তৈরি হয়। আমাদের এখানে জগন্নাথ দেব কিন্তু এই ৬২৭ বছর একই বিগ্রহে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পূজিত হয়ে আসছেন। অঙ্গরাগের সময় প্রভুকে নুতন ভাবে রং করা হয়। এবং তা হয় সম্পূর্ণ ভেষজ রঙ্গে। তেঁতুল বীজ থেকে আঠা কাজল লতার কালি, ভুসোকালি থেকে কালো রং,পুনম থেকে লাল রং শঙ্খ গুঁড়ো থেকে সাদা রং এগুলি ব্যবহার করা হয়। পনেরো দিন পরে আবার মন্দির খুলবে, এবং দুদিন মহা ধুমধামের সঙ্গে মন্দিরে নবযৌবন উৎসব পালিত হবে। তার পরের দিন সোজা রথে প্রভু মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। এই ভাবেই যুগ যুগ ধরে ঐতিহাসিক মাহেশের স্নানযাত্রা এবং রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
রাহী হালদার