TRENDING:

বিশেষ শর্তে সম্মতির পরেই বিয়েতে রাজি, প্রকৃতিই ছিল আরণ্যক সুন্দরলাল বহুগুণার ধাত্রীদেবতা

Last Updated:

শুধু পর্বত নয়, হিমালয় ছিল তাঁর হৃদয় ৷ অহরহ রক্তপাত হত সেখানে, যখন দেখতেন প্রকৃতি এবং বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বস্ত করে চলছে নাগরিক উন্নয়ন ৷ হিমালয় এবং তাঁর বাসিন্দারা ছিলেন বহুগুণার পরমাত্মীয় ৷ তাঁদের সার্বিক কল্যাণে ব্রতী ছিলেন আজীবন ৷

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
আজীবন গ্রামে থাকবেন ৷ সেখানেই আশ্রম খুলবেন দরিদ্র গ্রামবাসীদের জন্য ৷ এই শর্ত দিয়েছিলেন হবু স্ত্রীকে ৷ তাতেই রাজি হয়েছিলেন বিমলা ৷ বরমাল্যে বরণ করে নিয়েছিলেন তাঁকে, যাঁর নামের মতো কাজেও বিরাজ করে সবুজের সৌন্দর্য ৷
advertisement

সবুজের সাধক তিনি আজন্ম ৷ উত্তরাখণ্ডের তেহরিতে ১৯২৭ সালের ৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করা সুন্দরলাল বহুগুণা আকৈশোর গান্ধীবাদের ভক্ত ৷ মহাত্মার জীবনদর্শনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন জাতীয়তাবাদী নেতা শ্রী দেব সুমন ৷ তখন থেকেই অহিংস নীতিকে জীবনের মন্ত্রগুপ্তি বলে গ্রহণ করেছিলেন বহুগুণা ৷ সদ্য তারুণ্যে পা রেখেই সোচ্চার হয়েছিলেন অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে ৷

advertisement

মহাত্মার আদর্শকে ধ্রুবতারা করে যুবক বয়সেই বেরিয়ে পড়েছিলেন গহিন হিমালয়ের কোলে ৷ পর্বত এবং পার্বত্য সরলবর্গীয় অরণ্যে চলেছিল তাঁর পরিব্রাজন ৷ শুধু পর্বত নয়, হিমালয় ছিল তাঁর হৃদয় ৷ অহরহ রক্তপাত হত সেখানে, যখন দেখতেন প্রকৃতি এবং বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বস্ত করে চলছে নাগরিক উন্নয়ন ৷ হিমালয় এবং তাঁর বাসিন্দারা ছিলেন বহুগুণার পরমাত্মীয় ৷ তাঁদের সার্বিক কল্যাণে ব্রতী ছিলেন আজীবন ৷ জনকল্যাণের মধ্যে তাঁর কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মহিলাদের অবস্থান ৷ তাঁর নেতৃত্ব এবং দেখানো পথেই পাহাড়ি মহিলারা প্রতিবাদী হয়েছিলেন মদ্যপানের নেশার বিরুদ্ধে ৷

advertisement

স্বাধীনতার আগে কংগ্রেসের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল বহুগুণার ৷ পরে তাঁর আন্দোলনের ভরকেন্দ্র সরে এসেছিল সামাজিক সমস্যায়, যার অনেকটাই জড়িয়ে ছিল প্রকৃতির ভালমন্দের সঙ্গে ৷ প্রকৃতির প্রতি নিখাদ ভালবাসা ও যত্ন থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন ‘চিপকো’ আন্দোলনের সমার্থক ৷ আন্দোলন কীভাবে করবেন, তার প্রাথমিক ধারণা দিয়েছিলেন স্ত্রী, বিমলা৷

সে সময়ের উত্তরপ্রদেশের, এখন উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের কোল জুড়ে বিস্তৃত অরণ্যকে ঠিকাদারদের বৈদ্যুতিন করাতের কোপ থেকে বাঁচাতে জীবনপণ করেছিলেন বহুগুণা ৷ তাঁর কথায় হাতে হাত ধরে গাছেদের আগলে রেখেছিলেন স্থানীয় মহিলা ও শিশুরা ৷ গাছের প্রাণ নিতে হলে আগে তাঁদের হত্যা করতে হবে ৷ সবুজের সঙ্গে লেগে থেকে বা চিপকে থাকার ‘চিপকো’ আন্দোলনের ফল ছিল সুদূরপ্রসারী ৷ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বহুগুণার বৈঠকের পরে স্থগিতাদেশ জারি হয় গাছ কাটার উপর ৷ এই জয়লাভকে গ্রামবাসীদের সম্মিলিত প্রয়াস বলে চিহ্নিত করেছিলেন বহুগুণা ৷ আজীবন তাঁর মতবাদ ছিল, ‘বাস্তুতন্ত্রই অর্থনীতি’৷

advertisement

চিপকো আন্দোলন, ফাইল চিত্র

চিপকো-র মতো একই উদ্যমে বহুগুণা সামিল হয়েছিলেন তেহরি বাঁধ আটকানোর আন্দোলনে ৷ সাবেক উত্তরপ্রদেশের (এখন উত্তরাখণ্ডে) তেহরিতে ভাগীরথীর উপর বাঁধ নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন বহুগুণা ৷ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের দেখানো পথে তিনি ভাগীরথীর তীরে একাধিক অনশন কর্মসূচি পালন করেছিলেন ৷ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও-এর কাছ থেকে রিভিউ কমিটি তৈরির আশ্বাস পেয়ে ১৯৯৫ সালে দেড় মাসের অনশন আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান বহুগুণা ৷ পরে দেবগৌড়ার আমলে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে তিনি ৭৪ দিন ধরে অনশন কর্মসূচি পালন করেছিলেন ৷ এর পর সুপ্রিম কোর্টে এক দশকেরও বেশি আইনি লড়াই চলার পরেও বাঁধনির্মাণ শুরু হয় ২০০১ সালে ৷ সে বছর ২৪ এপ্রিল গ্রেফতার হন পরিবেশবিদ বহুগুণা ৷

advertisement

নিজের জন্মস্থানে নদীর গতিরুদ্ধ আটকাতে না পেরে বহুগুণা তেহরি ছেড়েই চলে যান ৷ প্রথমে কোটি এবং তার পর দেহরাদুনের থাকতেন তিনি ৷ তার বহু আগেই তেহরি বাঁধ প্রকল্পের পরিকল্পনা বন্ধ না করায় ১৯৮১ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করতে নারাজ হন তিনি ৷ ২৮ বছর পর পদ্মবিভূষণ অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেননি প্রবীণ এই পরিবেশবিদ ৷

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
এই মিষ্টি না থাকলে, লক্ষ টাকার নৈবেদ্যেও অসম্পূর্ণ! কালীপুজোয় 'মাস্ট' কী সেই জিনিস?
আরও দেখুন

যে পরিবেশকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসতেন তিনি, তার সঙ্গেই বিলীন হয়ে গেলেন গত ২১ মে ৷ রেখে গেলেন পরিবার, অসংখ্য গুণমুগ্ধ এবং হিমালয়ের সুবজকে ৷ কোভিডের অতিমারি তাঁকে অধরা করল শুধু চোখেই ৷ আসলে হিমালয়ের প্রতিটি কণায় রয়ে গেলেন তাদের পালকপিতা, আরণ্যক সুন্দরলাল বহুগুণা ৷ প্রকৃতি যেমন তাঁর ধাত্রীদেবতা ছিলেন, তিনিও ছিলেন প্রকৃতির লালনকারী ৷

বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
বিশেষ শর্তে সম্মতির পরেই বিয়েতে রাজি, প্রকৃতিই ছিল আরণ্যক সুন্দরলাল বহুগুণার ধাত্রীদেবতা
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল