এক মাথা কোঁকড়া চুলের পরিচালক ঋতুপর্ণর সঙ্গে মীরের প্রথম সাক্ষাৎ ইন্দ্রাণী পার্কে তাঁর বাড়িতে ৷ আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন বন্ধু সুদীপ্তা চক্রবর্তী ৷ প্রথম দেখার আন্তরিক, বন্ধুবৎসল ‘ঋতুদা’-র ভাবমূর্তি তাঁর কাছে এখনও অক্ষুণ্ণ ৷
তাঁর মতো গল্প বলিয়ে বিরল ৷ কোনও আঁতলেমি না করে নিজের বক্তব্য পেশ করার মুনসিয়ানা ছিল তাঁর সহজাত ৷ প্রয়াত পরিচালককে নিয়ে এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন মীর ৷
advertisement
একাধিকবার কথা হয়েছিল দু’জনের ৷ সেই স্মৃতি অনুরণিত হয় তাঁর মনে ৷ ঋতুপর্ণ ঘোষ একবার কথায় কথায় বলেছিলেন অপর্ণা সেনের সঙ্গে তাঁর টুকরো কথার কোলাজ ৷ অপর্ণা বলেছিলেন, ‘তুই তো মানিক কাকুকে টুকেছিস’৷ শুনে ঋতুপর্ণ বলেছিলেন, ‘ছেলেদের বাবার মতো দেখতে হয়’৷ এই উত্তর গেঁথে গিয়েছিল মীরের মনে ৷ এ ভাবেও শ্রদ্ধা জানানো যায় পূর্বসূরিকে? স্বীকার করা যায় উত্তরাধিকারের দায়িত্ব ? ঋতুপর্ণর প্রতি সেই মুগ্ধতা ক্রমেই গাঢ় হয়েছে মীরের হৃদয়ে ৷
তা হলে ‘ঘোষ অ্যান্ড কোম্পানি’-র সেই বিতর্কিত পর্ব? হয়েছিল, অভিমান হয়েছিল ৷ স্বীকার করেছেন মীর ৷ দাদার সঙ্গে ছোটভাইয়ের মতান্তরে যে অভিমান হয়, সেটাই হয়েছিল৷ কেন মীরের নকলনবিশি ভাল লাগেনি-তা নিয়ে ঋতুপর্ণ যে যুক্তি দিয়েছিলেন, তার সবগুলো মানতে পারেননি মীর ৷ শিল্পীর কথায়, তিনি প্রয়াত বহু ব্যক্তিত্বের মিমিক্রি করেছেন ৷ সাত বছর আগে মীর বলেন, বিদূষক রূপে ভবিষ্যতেও ঋতুপর্ণ ঘোষকে নকল করবেন ৷ কিন্তু অটুট থাকবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান ৷
যে শ্রদ্ধা অর্পণ করেছিলেন অনেকদিন আগেই, যখন দেখেছিলেন ঋতুপর্ণর মতো ব্যক্তিত্ব কত সময় দেন একজন নবাগতকে ৷ কীভাবে তাঁর বাড়িতে অবাধ ও সমান গুরুত্ব পান একজন খ্যাতনামী এবং একজন শিক্ষানবিশ ৷ দ্বিধাহীন কণ্ঠে জানিয়েছেন, প্রয়াত পরিচালকের প্রতি তাঁর মনে শ্রদ্ধা ছাড়া আর কোনও অনুভূতি নেই ৷ কোনও রাগ, বিদ্বেষ পুষে রাখেননি তিনি ৷
বরং, ‘ঘোষ অ্যান্ড কোম্পানি’-র বিস্ফোরক পর্বের পর মীর অনেক মুখোশ পরা মানুষকে চিনতে পেরেছেন ৷ যাঁরা ওই বিতর্ক থেকে ফায়দা লুঠতে চেয়েছিলেন ৷ সেই পর্বের দেড় বছর পর ‘মীরাক্কেল’-এর পঞ্চম মরসুমে দু’টি পর্বে এসেছিলেন ঋতুপর্ণ ৷ তখনই সেই মায়াময় ‘আয়’ শব্দে সব অভিমানের বরফ গলে গিয়েছিল ৷
তিনি ছিলেন সকলের থেকে আলাদা, তিনি ছিলেন তাঁর নিজের মতো ৷ ঋতুপর্ণ ঘোষ নারী, না পুরুষ, সেটা বিচার করার ভার একমাত্র আছে ঋতুপর্ণ ঘোষেরই ৷ অন্য কারওর নয় ৷ দৃঢ় বিশ্বাস মীরের ৷ তাই তিনি ঠিক যেরকম ছিলেন, ঠিক সেরকম ভাবেই মায়াময়, আন্তরিক, কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান, নরম মনের বইপাগল এই প্রতিভাবানকে পরজন্মেও পেতে চান মীর ৷ সঞ্চালক তথা শিল্পী আকণ্ঠ বিশ্বাস করেন পরজন্মতত্ত্বে ৷
কারণ মীরের বিশ্বাস, ব্যক্তি ঋতুপর্ণকে আমরা ঠিক মতো অনুধাবন করতে পারিনি ৷ তার জন্য প্রয়োজন আরও বেশ কিছু ঋতুর ৷ মীরের কথায়, ঋতু বদলায়, কিন্তু প্রতিভা অপরিবর্তনীয়, শাশ্বত ৷