টালমাটাল পায়ে
রাস্তার এক-পার থেকে অন্য পারে হেঁটে চলে যায়
সম্পূর্ণ উলঙ্গ এক শিশু"
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতার লাইনগুলো আজও যেন একইরকম সত্য! কলকাতার ফুটপাথের শিশুদের জীবন যেন একটুও পাল্টায়নি এই ২০২১-এও। তাঁদেরই খোঁজ নিতে অনুসন্ধানে নেমেছিল নিউজ 18 বাংলা। একটি এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট।
advertisement
কলকাতা শহর। চওড়া রাজপথ থেকে সরু গলির গোলকধাঁধা। প্রতি মুহূর্তে পা ফেলতে হয় সতর্ক ভাবে। এটা কলকাতার জীবন। এখানেই শৈশব ঘুমিয়ে থাকে মানুষের চলার পথে। তারা জানেই না,কোনটা শোবার ঘর, আর কোনটা ধুলো ভরা পথ। ফুটপাথ ধরে হাঁটছে হাজার হাজার মানুষ।পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথে ঘুমিয়ে রয়েছে দুটি সদ্যজাত শিশু। পাশ দিয়ে হেঁটে চলছে ব্যস্ত মানুষ। কোনও ভ্রুক্ষেপ না করেই। অদ্ভুতভাবে 'ওরা' যেন থেকেও নেই।
রাজ্যের মন্ত্রী,শশী পাঁজা সম্প্রতি বলেছিলেন, এই সমস্ত ফুটপাথবাসীরা যদি চান,তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন সরকার। তবে সেই পুনর্বাসন যদি ওরা ওদের গ্রামের বাড়িতে চায়,সেখানেই করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমস্যা একটাই, কলকাতা ছাড়তে নারাজ এঁদের অনেকেই। যদিও শহরে ফুটপাথবাসীর সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমেছে। তবু প্রচুর মানুষ নিজেদের ইচ্ছাতেই ফুটপাথে থেকে গিয়েছেন আজও।
বছর বারোর সায়রার বাড়ি ক্যানিংয়ে। এখানে পরিবার শুদ্ধ ফুটপাথে থাকে। ভিক্ষে করেই দিন গুজরান ওর মতো অনেকেরই। দুটি শিশুকে ফুটপাথে শুইয়ে রেখে চলে গেছে মা। অন্য কোথাও ভিক্ষা করতে। এই শিশুদের নজর কর্তা একমাত্র পুলিশের সিসিটিভি। মাঝে মাঝে এই ফুটপাথ থেকে শিশু চুরি হয়ে যায়। সেই চুরিতে শিশুর বাবা মায়েরা খুব একটা চিন্তিত হন না। এই রকম উত্তর কলকাতায় চুরি যাওয়া এক মায়ের বক্তব্য ছিল 'থাকার ঘর নেই,একবার কুকুরে টেনেছিল।যে নিয়ে গেছে, সে আল্লাহর কৃপায় ভালোই রাখবে।'
চিকিৎসকদের কথায়,এই ছোট্ট শিশুরা এই ভাবে রাস্তায় পড়ে থাকার জন্যই ফুসফুসে কার্বন আর ধুলো যায় অনবরত। যার ফলে এদের ছোট অবস্থা থেকে প্রচণ্ড সর্দি কাশি হতে দেখা যায়। প্রতি মুহূর্তে শিশু মনে কিছু চাইতে গিয়ে,প্রত্যাখ্যাত হয়। না পাওয়ার বাসনা একটা থেকেই যায়। যার থেকে মানসিক অস্বস্থিতে ভোগে এরা। কেউ কেউ ছোট থেকেই মাদ্যাকাসক্ত হয়ে পড়ে।যার ফলে অপরাধ জগতের সঙ্গে মিশে যায় খুব তাড়াতাড়ি। মনস্তত্ববিদেরা বলছেন, ওদের বাবা মায়েদের প্রথম থেকেই কাউন্সেলিং করে,তাদের সাধারণ চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা উচিত।নইলে পথ কুকুরের মত রাস্তায় পড়ে থাকবে, ওখানেই বড় হবে। তারপর একদিন মারা যাবে। কিন্তু উদ্যোগ নেবে কে? দায় কার? দায়িত্ব কি বর্তায় না প্রশাসনের?
প্রতিবেদক : শঙ্কু সাঁতরা