TRENDING:

তখন সোনার ভরি ১০০ টাকা, পয়লা বৈশাখের সকালে শুরু হত গয়না পরার প্রতিযোগিতা...

Last Updated:

শাশুড়ি, বউ, ননদ, জা সকলে মিলে ভারী ব্যস্ত সকাল জুড়ে। হালখাতায় পুরনো মোহরের ছাপ তুলে লক্ষ্মী-গণেশের নবকলেবর প্রতিষ্ঠার পালা। তারপর কবজি ডুবিয়ে ভোজ। বিকেলে কেওড়াজল ছিটানো সুশীতল ফল। সুবর্ণ কঙ্কণ ফরা ফর্সা রমণীদের কলকাকলি...

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা:  শাশুড়ি, বউ, ননদ, জা সকলে মিলে ভারী ব্যস্ত সকাল জুড়ে। হালখাতায় পুরনো মোহরের ছাপ তুলে লক্ষ্মী-গণেশের নবকলেবর প্রতিষ্ঠার পালা। তারপর কবজি ডুবিয়ে ভোজ। বিকেলে কেওড়াজল ছিটানো সুশীতল ফল। সুবর্ণ কঙ্কণ ফরা ফর্সা রমণীদের কলকাকলি...
advertisement

সেই সুবর্ণ দিনের গল্প, যা এককালের সফল সম্পন্ন সুবর্ণবণিক সমাজের অলীক অতীত। অশীতিপর এক বেনেবাড়ির কন্যা খুলে বসলেন হালখাতার বর্মিবাক্স। তাকিয়ায় হেলান দিয়ে পানের বাটা খুললেন। মেমসাহেবের মতো গায়ের রং। কানে চিকচিক করছে চাকা করে কাটা শসার মতো সাইজের একটা কানপাশা। শর্ত ছিল একটাই, প্রকাশ করা যাবে না বংশ পরিচয়। শর্ত মঞ্জুর! শুরু হল পুরনো রাস্তার অলিগলিতে অলস পায়ে হাঁটা...

advertisement

যদিও বলা হয়, মাছে-ভাতে বাঙালি, কিন্তু 'সোনার বাঙালি' বললেও ভুল হবে না! বাঙালির সঙ্গে সোনা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আজকাল না-হয় ধনতেরাসে সবাই গয়না কিনতে ছোটেন, কিন্তু পুরনো দিনে পয়লা বৈশাখেই কেনা হত সোনা। সোনার ব্যবসায়ী সুবর্ণবণিক পরিবারগুলিতে পয়লা বৈশাখের জৌলুসই ছিল আলাদা!

ভোর থেকে শুরু হত অনুষ্ঠানের তোড়জোড়! সকাল সকাল চান সেরে মা, জেঠিমা, কাকিমারা বসতেন সাজতে। সে এক এলাহি ব্যাপার। সর্বাঙ্গে দামি সুগন্ধি মাখতেন। তখনকার দিনে গন্ধবণিকদেরও ছিল রমরমা। এখন তো তাঁরা নেই বললেই চলে!

advertisement

কেয়ারি করে বাঁধা চুল, পরনে নতুন তাঁতের শাড়ি। অনেক সময়ে সূক্ষ্ম মসলিনও পরতেন। ছিল গয়না পরার ঢল! সে যেন এক মস্ত প্রতিযোগিতা! কে কত গয়না পরতে পারে! সেইসময় সোনার ভরি ছিল ১০০ টাকা।

আসতেন আলতামাসি বা নাপতিনি। সবাই সারি বেঁধে বসে আলতা পরতেন। ছোটরা মহাউৎসাহে দিতে আলপনা। ঠাকুঘরে মঙ্গল ঘট স্থাপন করা হত, মণ্ডপের চারদিকে লাগানো হত বনমালা।

advertisement

সেদিনের বাজার পর্ব ছিল দেখার মতো। বাবা জ্যাঠামশাইরা সদলবলে যেতেন বাজার করতে। প্রতিটা সুবর্ণবণিক বাড়িতে নিজ নিজ গৃহদেবতা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এদিন প্রথমে সেই দেবতার পুজো হত। মধ্য কলকাতার সেকরাপাড়া লেনের বিখ্যাত মন্মথনাথ দে'র বাড়ির গৃহদেবতা অষ্টধাতুর জয় জয় মা। চন্দ্রবাড়িতে পুজো হয় লক্ষ্মী-নারায়ণের। মল্লিকরা দুটো শাখায় বিভক্ত। এক শ্রেণির গৃহদেবতা মা সিংহবাহিনি দেবী, অন্য এক শ্রেণি পুজো করেন জগন্নাথ, নারায়ণ আর মা লক্ষ্মীর।

advertisement

পয়লা বৈশাখের দু'দিন আগে থাকতেই বের হত রুপোর সাবেকি বাসন। এদিন বাড়ির সবাই সেই বাসনেই খেতেন। মেনুতে সাধারণত থাকত পাঁচ রকমের ভাজা, শাকের ঘন্ট, মাছের মুড়ো দিয়ে ডাল, মাছের কালিয়া, পায়েস, চাটনি। মাংস হত না।

তখনকার দিনে বাড়িতেই গরু থাকত। সেই দুধ কাটিয়ে ছানার সন্দেশ বানানো হত। আর থাকত নারকেল নারু, লাড্ডু। বিশাল রুপোর রেকাবিতে বরফকুচির উপর নানাধরনের ফলের টুকরো সাজিয়ে রাখা হত। উপরে ছিটিয়ে দিত কেওড়ার জল। দুপুরে ভোজের পর এই ফল আর ডাবের জল খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। বিকেলে জলখাবারে থাকত--পেরাকি, লাড্ডু, নাড়ু, শিঙাড়া আর কচুরি। অনেক বাড়িতে সন্ধেবেলায় গানের আসরও বসত।

ব্যবসাক্ষেত্রে নারায়ণ শিলা প্রতিষ্ঠা করা হত। তারপর গণেশের অভিষেক। অনেকে আবার মন্দিরে গিয়েও গণেশের পুজো করিয়ে আনতেন। শুধুমাত্র সিদ্ধি আর মধু দিয়ে গণেশ পুজো হত। বাংলাদেশ থেকে যখন মানুষ এদিকে এলেন, তখন গণেশের সঙ্গে লক্ষীঠাকুর পুজোর চল শুরু হল।

এদিন হালখাতা খোলার দিন। খাতায় বসুধারা, স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে, সোনার মোহরে সিঁদুর মাখিয়ে ছাপ তোলা হত। একে বলে মহরত।

উত্তর কলকাতার এই বিশাল বাড়িটায় বৃদ্ধা এখন প্রায় একাই থাকেন। ছেলে, মেয়ে, বৌমা, নাতি, নাতনি--সবাই যে যাঁর মতো কলকাতার বাইরে প্রতিষ্ঠিত। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে আর মা'কে প্রণাম করতে আসার সময় হয় না তাঁদের।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
ফাঁকা জায়গার লাগবে না, আমবাগানেই হচ্ছে কুইন্টাল কুইন্টাল ফলন! বিনা ব্যয়ে লাভ পাচ্ছেন চাষি
আরও দেখুন

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলেন বৃদ্ধা। দোতলায় উঠে লম্বা বারান্দা। ডান দিকে রেলিং। রেলিংয়ের উপর ঝুঁকলে নীচে একতলায় চৌবাচ্চা আর উঠোন দেখা যায়। ভাঙা রেলিংয়ের ফাঁকগুলো যেন উপোসি জন্তুর মতো হাঁ করে আছে। এরপর ডানদিক বেকে, বাঁ-দিক ঘুরে, এ গলি সে গলি পার হয়ে উত্তর দিকে তিন-চারটে ধাপ উঠলে তাঁর শোয়ার ঘর। উঁচু কাঠের ঝিলমিল দিয়ে ঢাকা। বেলা গড়িয়ে গিয়েছে। এবার সূর্য ডোবার পালা। পড়ন্ত রোদের আলোয় ফের একবার চিকচিক করে উঠল বৃদ্ধার কানপাশা।

বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
তখন সোনার ভরি ১০০ টাকা, পয়লা বৈশাখের সকালে শুরু হত গয়না পরার প্রতিযোগিতা...
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল