সরলা দেবী সঙ্গে নিয়েছিলেন বাড়ির বকুল ফুলের নিজের হাতে গাঁথা মালা। পথে কিনে নিয়েছিলেন বেল ফুলের মালা-সহ আরও নানা ফুল, ছিল একজোড়া ধুতি-চাদর এবং একটি ইংরেজি কবিতার বই, The Poems of Heine
এরপর ৪৯ নং পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে চুপিসারে ঢুকে সোজা চলে গেলেন রবীন্দ্রনাথের ঘরে। ঘুমন্ত রবীন্দ্রনাথকে জাগিয়ে ফুল-মালা-ধুতি-চাদর তাঁর পায়ের কাছে রেখে প্রণাম করলেন। জ্যোৎস্নানাথ রবিমামাকে প্রণাম করে কবিতার বইটি উপহার দিলেন, যা কিনা রবীন্দ্রনাথের জীবনে জন্মদিনে পাওয়া প্রথম উপহার হিসেবে স্বীকৃত। এরপর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও রবীন্দ্রনাথকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা-আশীর্বাদ-প্রণাম জানালেন, সবার মুখে মুখে ফিরতে লাগল একটাই কথা, '' রবির জন্মদিন''
advertisement
তবে, ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ নন, প্রথম জন্মদিন পালন হয়েছিল ইন্দিরা দেবীর। বলা যায়, সেখান থেকেই শুরু হয় জন্মদিন পালনের চল।সেবার ১৮৮৫ সাল, ২৯ ডিসেম্বর 'রবিকা'-র আদরের 'বিবি'-র জন্মদিন, কবিগুরু ‘জন্মতিথির উপহার’ নামে একটি কবিতা লিখলেন, সেই সঙ্গে একটি কাঠে বাক্স উপহার দিলেন বিবিকে। ইন্দিরা দেবী সেবার ১৩-এ পড়লেন । এর আগে ঠাকুর পরিবারে ঘটা করে জন্মদিন পালন হত না, সেই প্রথম, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী বিলেত থেকে ফিরে দুই সন্তান, সুরেন্দ্রনাথ এবং ইন্দিরার জন্মদিন পালনের প্রথা চালু করলেন।
রবীন্দ্রস্মৃতি’ গ্রন্থে ইন্দিরা দেবী লিখেছিলেন, ‘আমার জন্মদিনে একটি সুন্দর পিয়ানোর মতো গড়নের দোয়াতদানি উপহার দিয়ে তার সঙ্গে যে কয়েক ছত্র লিখেছিলেন সেও তাঁর হাতের স্পর্শে উজ্জ্বল।’
এরপর রবীন্দ্রনাথের জীবনে অনেক জন্মদিন এসেছে। ১৮৯৫ সালে, ৩৫-তম জন্মদিন প্রসঙ্গে ‘রবীন্দ্রস্মৃতি’-তে ইন্দিরাদেবী লিখেছিলেন, ‘একটি খাতায় আমাদের প্রিয় ইংরেজ কবিদের বিখ্যাত কবিতাগুলি নকল করে তাঁকে উপহার দিয়েছিলাম।’ কিটস, শেলি, ব্রাউনিং, টেনিসন, বায়রন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ-সহ বহু বিশিষ্ট ইংরেজ কবিদের ৭২-টি কবিতা ইন্দিরা নিজের হাতে নকল করে ২৮০ পাতার একটি সুদৃশ্য বাঁধানো খাতা উপহার দিয়েছিলেন তাঁর আদরের রবিকা-কে।