TRENDING:

Fathers Day 2020৷ 'ছেলের জন্য আপনার সাইকেল চুরি করতে বাধ্য হলাম', সব বাবাদেরই সাহস জোগাবে ইকবাল, মকসুদদের লড়াই

Last Updated:

করোনার জাঁতাকলে পড়ে পৃথিবীর অধিকাংশ বাবাদের কাছেই হয়তো এবারের ফাদার্স ডে-টা খুব কঠিন৷ তার কারণও অভিন্ন৷

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা: করোনা, লকডাউন, সংক্রমণের ভয়, চাকরি হারানোর আতঙ্ক, ব্যবসায় মন্দা...না, ফাদার্স ডে-টা এবারে আর নিশ্চিন্ত মনে কাটাতে পারবেন না অনেক বাবাই! ফাদার্স ডে- উদযাপনে ভারতবর্ষে কতজন বাবা বা তাঁদের সন্তানরা সত্যিই মেতে ওঠেন, তা বলা মুশকিল৷ কিন্তু এটা ঠিক, এই দিনটিই হয়তো তাঁদের পিতৃত্বের দায়িত্বগুলো ফের একবার মনে করিয়ে দেয়, আর তাতেই গর্বিতই বোধ করেন সব বাবা৷ কিন্তু এ বছরটা ব্যতিক্রম৷ এ বারের ফাদার্স ডে-তে হয়তো দায়িত্ববোধের সঙ্গে একগুচ্ছ উদ্বেগ, চিন্তাও উঁকি দেবে সব বাবাদের মনে৷ কারণ যে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে দেশ, দুনিয়া চলেছে, তাতে বাবা হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব কে কতটা পূরণ করতে পারবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর অনিশ্চিত৷
advertisement

গত তিন মাসে আমাদের চারপাশে যা যা ঘটছে, তার বেশির ভাগটাই হয়তো হতাশাজনক৷ কিন্তু অন্ধকারে আলো খোঁজার মতোই এই প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের সাহস জোগাতে উদাহরণ খুঁজে নিতে পারবেন প্রত্যকেই৷ বাবারাই বা বাদ যাবেন কেন৷ এই দুঃসময় তো তাঁদেরও কম পরীক্ষা নেয়নি!

যেমন করোনা সংক্রমণ রুখতে শুরু হওয়া লকডাউনে রাজস্থানের ভরতপুরে কাজ হারালেন মহম্মদ ইকবাল নামে এক পরিযায়ী শ্রমিক৷ তখনও পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে শ্রমিক স্পেশাল চালু হয়নি, বলা ভাল রেল লাইনে কাটা পড়ে ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়নি৷ তাই সরকার, আদালত কেউই নড়ে বসেনি৷ ২৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর প্রদেশের বরেলির বাড়িতে ফেরার জন্য ভরতপুরেরই এক বাসিন্দার সাইকেল চুরি করলেন মহম্মদ ইকবাল৷ না চুরিটা তিনি নিজের জন্য করেননি৷ সাইকেল মালিকের উদ্দেশে চিঠিতে লিখলেন, 'ক্ষমা করবেন, আমি অপরাধী৷ কিন্তু প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য আপনার সাইকেল চুরি করতে বাধ্য হলাম৷' ইকবালের আত্মসম্মান বোধ প্রবল, কিন্তু তার থেকেও বাবা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব অনেক বেশি৷ পিতৃত্বের দায়িত্ব পালনের সেই তাগিদেই তিনি নিজের আত্মসম্মানবোধকে চাপা দিয়ে দিয়েছিলেন৷ জয় হয়েছিল পিতৃত্বের৷

advertisement

ইকবাল চেষ্টা করে পেরেছিলেন৷ কিন্তু অনেকে ততটা সৌভাগ্যবান নন৷ যেমন বিহারের পশ্চিম চম্পারনের বাসিন্দা পেশায় রংমিস্ত্রি মহম্মদ মকসুদ৷ লকডাউনে কাজ হারিয়ে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন৷ প্রবল গরমে মাঝপথেই অসুস্থ হয়ে পড়ে তাঁর চার বছরের ছেলে৷ মুজফফরপুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে ছেলের জন্য এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছোটাছুটি করেছিলেন মকসুদ৷ যদি অভুক্ত ছেলেকে একটু দুধ খাওয়ানো যায়, একটু সাহায্য মেলে৷ কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন মকসুদ৷ তাঁর চার বছরের শিশু সন্তান ওই স্টেশন চত্বরেই মারা যায়৷ হতভাগ্য মকসুদ কাজ, সন্তান সবই হারালেন৷ পিতা হিসেবে তিনি ব্যর্থ, নাকি মকসুদদের সন্তানের জন্য সামান্য দুধ জোগাড় করতে না পারাটা প্রশাসন, সহ নাগরিকদের ব্যর্থতা, তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে৷ কিন্তু মকসুদের মতো কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়নি, এটা ভেবেই অন্তত এবারের ফাদার্স ডে-তে নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিতে পারেন অনেকেই!

advertisement

এ‌ তো গেল পিতৃত্বের পরীক্ষা৷ কেউ পাশ করেন, কেউ ব্যর্থ হন৷ কিন্তু ফাদার্স ডে মানে তো বাবাদের জন্য সন্তানের তরফ থেকে কোনও উপহার৷ বাবার প্রতি সন্তানের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ৷ বিহারেরই দ্বারভাঙার জ্যোতি কুমারীকে হয়তো অনেকেই ভুলে গিয়েছেন৷ কিন্তু কয়েকদিন আগেই এই জ্যোতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ কারণ দুর্ঘটনায় আহত কর্মহীন বাবাকে সাইকেলের পিছনে বসিয়ে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হরিয়ানার গুরুগ্রাম থেকে দ্বারভাঙার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল জ্যোতি৷ জ্যোতির গর্বিত বাবা পরে বলেছিলেন, 'কন্যাসন্তানরা বোঝা নয়, আসলে সম্পদ৷' ফাদার্স ডে কী হয়তো জ্যোতির বাবা জানেন না, কিন্তু বাবার প্রতি সন্তানের এই দায়বদ্ধতা, ভালবাসা কি আর পাঁচজন বাবাকেও উদ্দীপ্ত করবে না?

advertisement

আসলে করোনা সংক্রমণ চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে দিয়েছে৷ এত দিন ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে বোধ হয় সমাজের একটা স্তরের জন্য আবদ্ধ ছিল৷ মাঝে মধ্যে প্রান্তিক কোনও পরিবারের সন্তানের প্রতি মা-বাবার স্নেহের ছবি ফাদার্স ডে বা মাদার্স ডে সেলিব্রেট করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ত৷ কিন্তু করোনার দিনগুলিতে আরও একবার প্রমাণ হল, সন্তানের এবং বাবা মায়ের মধ্যে, সমাজের সব স্তরেই টানটা সত্যিই অকৃত্রিম৷ করোনা ভাইরাস, লকডাউন, আমফান- কোনও কিছুই তাতে চিড় ধরাতে পারে না৷

advertisement

লকডাউন পর্বে পরীযায়ী শ্রমিক বলে একটি শ্রেণি বা শব্দবন্ধের সঙ্গে পরিচিত হলাম সবাই৷ চোখে আঙুল দিয়ে তাঁরা দেখিয়ে দিলেন, কাজ হারিয়ে, নিরাশ্রয় হয়েও বাবা-মা হিসেবে দায়িত্ব পালন কাকে বলে৷ কেউ সন্তানকে ঘাড়ে নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন, কেউ সন্তানের জন্য চুরি করেছেন, আবার কেউ হবু সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে স্ত্রীকে ছোট ট্রলিতে বসিয়ে টানতে টানতে হাইওয়ে ধরে হেঁটেছেন৷ তাঁদের এই লড়াইটাই হয়তো কর্পোরেট জগতে চাকরি হারানো, বাড়িতে ছোট সন্তানকে রেখে সংক্রমণের বিপদ মাথায় নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশকর্মীর মতো যোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছে৷ তাই এবারের ফাদার্স ডে-তে পরিযায়ী শ্রমিকের তকমা ছেঁটে বাবা হিসেবে মহম্মদ ইকবালদের দায়িত্ববোধকে সেলিব্রেট করলে ক্ষতি কী!

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
বিজয়াতেই ঘরে ঘরে 'টিকা'র প্রস্তুতি! গোর্খাদের এই উৎসব বাঙালির খুব চেনা
আরও দেখুন

করোনার জাঁতাকলে পড়ে পৃথিবীর অধিকাংশ বাবাদের কাছেই হয়তো এবারের ফাদার্স ডে-টা খুব কঠিন৷ তার কারণও অভিন্ন৷ সেই সমস্ত বাবারাই মহম্মদ ইকবালদের দেখে কিছুটা সাহস পেতে পারেন৷ ফাদার্স ডে যায় আসে, বদলায় না সন্তানের প্রতি বাবাদের অকৃত্রিম ভালবাসা৷ সেই ভালবাসার জোরেই হয়তো হার মানবে করোনা৷ 'ফাদার্স ডে' আবারও আগের মতোই 'হ্যাপি' হয়ে উঠবে!

বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
Fathers Day 2020৷ 'ছেলের জন্য আপনার সাইকেল চুরি করতে বাধ্য হলাম', সব বাবাদেরই সাহস জোগাবে ইকবাল, মকসুদদের লড়াই
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল