TRENDING:

নাহ ! এবার আর 'গল্প' নয়, শুধুই 'সত্যি' ! চিরবিদায় চিন্ময় রায়

Last Updated:
impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা: ২০১৬ সাল! তপন সিংহর কালজয়ী ছবি 'গল্প হলেও সত্যি'র ৫০ বছর! এই ছবির ৫০ বছরের সঙ্গে সঙ্গে সে'বছর এক বাঙালি অভিনেতারও ছবিতে অভিনয়ের ৫০ বছর হয়েছিল! চিন্ময় রায়! এই ছবি দিয়েই তাঁর ফিল্মে অভিনয় শুরু!
advertisement

গল্ফগ্রিনে পৌঁছে, বলে দেওয়া আবাসনের কাছাকাছি এসে সেদিন ফোন করেছিলাম, 'আপনার ফ্ল্যাটের নম্বরটা বলবেন?' তিনি বলছিলেন, ' তুমি কোথায়? আমি রাস্তায় এসে দাঁড়াচ্ছি!' অপ্রস্তুত হয়ে বলেছিলাম, 'না, না! সেকি! আপনি কেন রাস্তায় এসে দাঁড়াবেন? আপনার ফ্ল্যাটের নম্বরটা বলুন, আমি ঠিক পৌঁছিয়ে যাব!'

তিনি বলেননি! রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন চিন্ময় রায়! আবাসনের গেট ঠেলে ঢুকে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম! তিনি বলেছিলেন, 'ওদিকে না, এদিকে!' গ্যারাজ সংলগ্ন একটা ঘর! সেখানেই তখন বাংলার কিংবদন্তী শিল্পীর দিন কাটে! একাকী, নির্বান্ধব, স্বজনহারা...! ওইঘরের কোনও নম্বর ছিল না...

advertisement

একফালি ঘরটায় একটা চৌকি, ছোট্ট একটা ইনডাকশন, একটা আধভাঙা তাকে কয়েকটা অ্যাওয়ার্ড! একসময়ে যিনি নিরন্তর বাঙালি দর্শককে হাসিয়ে গিয়েছেন, সেদিন এক ঝলকের জন্য হলেও তাঁর চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল তীব্র একটা কষ্ট...! কিন্তু তিনি চিন্ময় রায়! স্বভাবসিধ্য হাসিতে মুহূর্তে উড়িয়ে দিলেন যন্ত্রণা, ঠোঁটে হাসি টেনে, চৌকিটা দেখিয়ে বললেন, 'বোসো'! সামনে একটা টুল টেনে নিজে বসলেন! শুরু হল নস্টালজিয়ার পথ ধরে হাঁটা, কোলাজের মতো ফুটে উঠতে লাগল 'গল্প হলেও সত্যি'র দিনগুলো ... '' আমার তখন যা চেহারা, তাতে পাড়ার ফিচকে চোরের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম। একটা দৃশ্য ছিল-- আমি বাড়ির সকলের সামনে কাজের লোকের ইন্টারভিউ দেব। তখন আমি নতুন, সামনে তুখড় তুখড় সব অভিনেতা, ভয়ে সিঁটকে গিয়েছিলাম। কিন্তু জানতাম, এটাই সুযোগ! অভিনয়ের যা কায়দা-কৌশল জানি, তা এখানেই দেখিয়ে দিতে হবে। ঝাঁপিয়ে পড়লাম।''

advertisement

একটানা কথা বলে হাফিয়ে গিয়েছেন! গত কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন! থামলেন! উঠে গিয়ে ঘরের এককোণে রাখা একটা ওয়াটার ফিল্টার থেকে স্টিলের গ্লাসে জল নিলেন ! এসে বসলেন টুলে, চকচক করে উঠল চোখদুটো! বলে চললেন, ওই ছোট্ট দৃশ্যটার জন্য তিন-চারদিন রিহার্সাল করেছিলাম। সেদি ওই চরিত্রটা যদি না পেতাম, তা হলে হয়তো সিনেমায় আসা হত না, বা কেউ ডাকতেনও না! ওই শটটা দেওয়ার পর ছায়াদেবী এগিয়ে এসে বলেছিলেন, ' আপনি কখনও অভিনয় ছাড়বেন না। মনে হতে পারে আপনি রোগা, কিন্তু আপনার অভিনয় ভাল। মনে হয় সার্থক হবেন।' ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ' তুই কি ঢাকার ছেলে?' আমি বললাম, 'হ্যাঁ'! উনি বললেন, '' ঠিক জানতাম! ঢাকার লোক ছাড়া এমন অ্যাক্টিং করতে পারে নাকি? খুব সুন্দর হয়েছে। পাঁচদিনের কাজ ছিল আমার। তপনদাও আমার কাজে খুশি। এরপর ওঁর আরও চার-পাঁচটা ছবিতে কাজ করেছি। 'গল্প হলেও সত্যি' আমার কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। প্রথম দিন শুটিংয়ের পর রবিদা ডেকে বলেছিলেন, 'সন্ধেবেলায় মহিম হালদার স্ট্রিটে আমার বাড়ি চলে এস! কথা আছে!' যেতেই বললেন, 'নাটকটা ছেড়ো না। সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি নাটকও চালিয়ে যাও। দুম করে নাটক ছাড়লে দলের ক্ষতি হয়!' কিন্তু আমার আর নাটক করা হল না! 'থিয়েটার ওয়র্কশপ'-এ নোটিশ দিয়ে পুরোপুরি চলে এলাম সিনেমায়। পাঁচদিন কাজ করে পাঁচশো টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকা খরচ করতে আমার প্রায় ২০ দিন লেগেছিল। প্রথমদিনের একশো টাকায় পার্ক স্ট্রিটে বিয়ার খেয়েছিলাম, ট্যাক্সি করে সিঁথি গিয়েছিলাম, পরের দিন বাড়িতে বাজার করার টাকাও দিয়েছিলাম।

advertisement

আড্ডা শেষে বহুতলের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিলেন। দেখিয়ে দিয়েছিলেন মেন রোডে পৌঁছানোর শর্টকাট রাস্তা!

কাট!

দৃশ্য ২!

২০১৯ ! ১৭ মার্চ! রাত ১০টা বেজে ১০ মিনিট ! নাহ! এবার আর কোনও 'গল্প' নয়, সবটাই শুধু 'সত্যি'! চলে গেলেন চিন্ময় রায়! চিরবিদায়...!

বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
নাহ ! এবার আর 'গল্প' নয়, শুধুই 'সত্যি' ! চিরবিদায় চিন্ময় রায়