TRENDING:

রামকৃষ্ণের ভাবসমাধি থেকে জেব্রায় টানা ট্রটিং গাড়ি! স্মৃতিতে মুখর পাথুরিয়াঘাটের মল্লিকবাড়ি

Last Updated:

রামকৃষ্ণের ভাবসমাধি থেকে জেব্রায় টানা ট্রটিং গাড়ি! হাজারো স্মৃতিতে মুখর পাথুরিয়াঘাটের মল্লিকবাড়ি

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা: জোড়া ঘোড়ায় জুড়ি গাড়ি টানে, সে সবার জানা! কিন্তু, জোড়া জেব্রায় গাড়ি টানছে, তাও আবার দিনেদুপুরে, কলকাতা শহরে, এ'কথা শুনলে, অনেকেই ভাবতে পারে, হয় পাগল নয় পেটখারাপ!
advertisement

কিন্তু  এই দৃশ্যটা সত্যি! তাও, বেশিদিন আগের ঘটনা নয়! ১৯৩৫ সাল! পাথুরিয়াঘাটের যদুলাল মল্লিকের ছোটছেলে মন্মথনাথ মল্লিকের ট্রটিং গাড়ি টানত দুটো জেব্রা। কিন্তু হঠাৎ জেব্রা কেন? বড়লোকের খেয়াল বলতে পারেন! আলিপুরের চিড়িয়াখানা থেকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে একজোড়া জেব্রা কিনেছিলেন মন্মথনাথ। তারপর, তাদের গাড়ি টানার ট্রেনিং দিলেন। যেদিন প্রথম কলকাতার রাস্তায় বেরিয়েছিল সেই জেব্রায় টানা গাড়ি, রাস্তার অবাক মানুষের চোখর পলক পড়েনি! 'স্টেটসম্যান' পত্রিকায় খবরটা ছেপেও বেরিয়েছিল।

advertisement

৬৭ পাথুরিয়াঘাট স্ট্রিটের বিখ্যাত মল্লিক পরিবার। যাত্রা শুরু সেই পর্তুগিজ আমলে। সপ্তগ্রামের বন্দরের অবলুপ্তির পর ধনী বৈশ্য সুবর্ণবণিক ব্যবসায়ীরা যখন কলকাতায় এসে ব্যবসা শুরু করলেন, সেই তবে থেকে। সেদিনের সেই সুবর্নবণিকদের মধ্যে অন্যতম যদুলালের পূর্বপুরুষেরা।

যদুলালের পিতামহ ছিলেন নিমাইচরণ মল্লিক। তাঁর সময় থেকেই মল্লিকেদের রমরমা শুরু। বিখ্যাত পঞ্জাবি ব্যবসায়ী হুজুরিমিলের অনেক সম্পত্তিই বন্ধক রাখা ছিল নিমাইচরণের কাছে। বাংলার বড়-বড় জমিদার ও ইংরেজ ব্যবসায়ী, এমনকী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও তাঁর থেকে টাকা ধার নিত। তৃতীয় মহিশুর যুদ্ধের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে তিনি ৪৮ লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন।

advertisement

যুদ্ধে জেতার পর, সেই সময়কার বড়লাট লর্ড কর্নওয়ালিশ নিমাইচরণকে সোনার মেডেল দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। এমনকী, বিলেতের রাজসভা থেকে তাঁর ছবি চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ছবি তুললে আয়ু ফুরিয়ে যায়! সেই জন্যই ছবি তুলতে রাজি হননি নিমাইচরণ। কিন্তু তিনি যখন চোখ বুজে আহ্নিক করছিলেন, তখন নাকি ছেলেরা তাঁর ছবি তুলে বিলেতে পাঠিয়ে দেন।

advertisement

নিমাইচরণ মহাজন হলেও অন্যের উপকার করতে সবসময় এক পা এগিয়ে থাকতেন। তাঁকে লোকেরা যেমন ভালবাসত, বিশ্বাসও করত! তাঁর নামে কাটা হুন্ডির তোড়া টাকার মতো বাজারে লেনদেন হত। তাঁকে লোকেরা বলতেন ব্যাঙ্কার ও মিন্ট মাস্টার।

এহেন নিমাইচরণের নাতিই ছিল যদুলাল মল্লিক। তাঁর পাথুরিয়াঘাটের বাড়িতে কে এসেছেন আর কে আসেননি! এই বাড়ির সিংহবাহিনী ঠাকুরদালানে একবার রামকৃষ্ণের ভাবসমাধি হয়েছিলেন। সেদিন ছিল ১৮৮৩ সালের ২১ জুলাই। আজও এইদিনে পাথুরিয়াঘাটের মল্লিকবাড়িতে উৎসব হয়।

advertisement

উত্তর কলকাতার সরু, সর্পিল একটি রাস্তা পাথুরিয়াঘাট স্ট্রিট। এখানেই এখনও স্বমহিমায়, বহু স্মৃতির আলোয়ান গায়ে জড়িয়ে, মাথা তুলে দাঁড়িয়ে  মল্লিকবাড়ি। রাস্তা থেকে ৫ ফুট উঁচু প্লিনথের বাড়িটি তৈরি করেছিল ম্যাকিনটশ বার্ন। দোতলা বাড়ি। মাঝখানে খোলা উঠোন, চারপাশে বারান্দা। উঠোন সংলগ্ন ঠাকুরদালান।

নীচের তলার বড়বড় ঘরগুলো অন্ধকার, স্যাঁতসেতে। সেখানে দাঁড়িয়ে এক গ্রিক সন্তের মূর্তি। কিছু যেন বলছে...!

সেই দিনটার কথা কী? যেদিন বড় ছেলে রাসবিহারির বিয়েতে যদুলাল ফোর্ট উইলিয়ম থেকে 'কেল্লার ঘোড়ার বাজনা' নিয়ে শোভাযাত্রা করেছিলেন। এই যাত্রায় ছিল তলোয়ারধারী ঘোড়সওয়ার, ৩৬টি পুলিশ ঘোড়সওয়ার, ৪ ঘোড়ার টানা দুটি গাড়ির কনসার্ট পার্টি ও ১৬ ঘোড়ায় টানা একটি গাড়ি। না কী মনে করছে সেই সব দিন, যখন এই পাথুরিয়াঘাটের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকত ৩৫টি গাড়ি। সেগুলো ছিল যদুলাল মল্লিকের নাতি প্রদ্যুম্নকুমারের। এই ৩৫টি গাড়ির মধ্যে ১০টিই ছিল রোলস রয়েস!

আরও পড়ুন-'টেগোর ক্যাসল', কলকাতায় বিলেতের হাইল্যান্ড ক্যাসল-এর ধাঁচে তৈরি একমাত্র বাড়ি

বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
রামকৃষ্ণের ভাবসমাধি থেকে জেব্রায় টানা ট্রটিং গাড়ি! স্মৃতিতে মুখর পাথুরিয়াঘাটের মল্লিকবাড়ি